ত্বকী হত্যার ১০২ মাস, হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে আলোক প্রজ্বালন

নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার পর থেকে বিচার শুরু ও চিহ্নিত আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। সেই ধারাবাহিকতায় আজ ৮ সেপ্টেম্বর আলোক প্রজ্বালন করেছে সংগঠনটি। আজ ত্বকী হত্যার সাড়ে আট বছর (১০২ মাস) পূর্ণ হয়েছে। এ উপলক্ষে ঘাতকদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি পুনরায় জানিয়ে সন্ধ্যায় শহরের ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকায় আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার ও মিলনায়তন প্রাঙ্গণে কর্মসূচি পালন করা হয়।

সংগঠনের সভাপতি ভবানী শংকর রায়ের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন নিহত ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান, খেলাঘরের জেলা সভাপতি রথীন চক্রবর্তী, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি জিয়াউল ইসলাম, প্রদীপ ঘোষ, সহসভাপতি মুহাম্মদ সেলিম, বাসদ জেলা সমন্বয়ক নিখিল দাস, ন্যাপ জেলা সম্পাদক আওলাদ হোসেন, সিপিবি জেলা সাধারণ সম্পাদক শিবনাথ চক্রবর্তী, গণসংহতি আন্দোলন জেলা সমন্বয়ক তরিকুর সুজন এবং সামাজিক সংগঠন সমমনার সভাপতি দুলাল সাহা।

ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি বলেন, দলীয় সন্ত্রাসী ও দুর্বৃত্তদের রক্ষার জন্য সরকার ত্বকী হত্যায় অঘোষিত ‘ইনডেমনিটি’ জারি করে রেখেছে। ত্বকী হত্যার ঘাতক শনাক্ত হলেও তারা আইনের আওতায় আসে না, অভিযোগপত্র তৈরি করেও তা তারা সাড়ে আট বছর ধরে আটকে রেখেছে। জনগণের নিরাপত্তা দেওয়ার শপথ করে শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা গ্রহণ করেছিল, অথচ তারাই পদে পদে সে শপথ ভঙ্গ করে চলেছে, সংবিধান লঙ্ঘন করে চলেছে।

রফিউর রাব্বি ত্বকীসহ সাগর-রুনী, তনু ও নারায়ণগঞ্জের আশিক, চঞ্চল, বুলু, মিঠু হত্যার বিচার দাবি করেন। তিন বছর আগে নিখোঁজ আড়াই বছরের শিশু সাদমান সাকিকে উদ্ধারের দাবি জানান।

সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান বলেন, ত্বকীর ঘাতকেরা এখনো ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তারা নারায়ণগঞ্জকে অশান্ত করতে চায়। হুংকার দিয়ে ভয় দেখিয়ে প্রতিবাদ দমাতে চায়। তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি কোনো একটি পরিবারের প্রধানমন্ত্রী নন, ষোলো কোটি মানুষের প্রধানমন্ত্রী, আপনি নারায়ণগঞ্জের মানুষের পাশে দাঁড়ান, নারায়ণগঞ্জের সব হত্যার বিচার করুন।’

২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরের শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দুই দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়।

২০১৪ সালের মার্চ তদন্তকারী সংস্থা র‍্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের নির্দেশে তাদেরই টর্চার সেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছে। অচিরেই তারা অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করবে। কিন্তু সে অভিযোগপত্র এখনো আদালতে পেশ করা হয়নি।