Thank you for trying Sticky AMP!!

দেবীদ্বারে ছুরিকাঘাতে জোড়া খুন

কনের গায়েহলুদের অনুষ্ঠানে উচ্চস্বরে গান বাজানো ও উত্ত্যক্তকে কেন্দ্র করে কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের জীবনপুর গ্রামের ইনসাফ মার্কেট এলাকায় গতকাল বুধবার রাতে দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় ছুরিকাঘাতে ২ জন নিহত ও অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় কনের বাবাসহ দুই ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়।

এ নিয়ে থানায় আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। লাশ দুটি কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের সদস্যদের কাছে বৃহস্পতিবার বিকেলে হস্তান্তর করা হয়।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার গুঞ্জর গ্রামের আবু হানিফের ছেলে ও কোম্পানীগঞ্জ বদিউল আলম উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাহিম হাসান (১৭) এবং দেবীদ্বার উপজেলার আবদুল্লাহপুর গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে সাইফুল ইসলাম (২০)।

পুলিশ ও এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার রাতে দেবীদ্বারের সুবিল ইউনিয়নের আবদুল্লাহপুর গ্রামের প্রবাসী মো. জাকির হোসেনের মেয়ের গায়েহলুদের অনুষ্ঠান চলছিল। এ সময় উচ্চস্বরে গান বাজিয়ে নাচানাচি চলে। রাত ১১টার দিকে পার্শ্ববর্তী মুরাদনগরের পূর্ব নবীপুর ইউনিয়নের গুঞ্জর গ্রামের অন্তত ছয়জন তরুণ ও কিশোর এসে ওই বাড়ির অনুষ্ঠানে নাচানাচি শুরু করেন। এ সময় একজন আরেকজনের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করেন। একই সঙ্গে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করেন। এ নিয়ে বিয়েবাড়ির আবদুল্লাহপুর গ্রামের ছেলেদের সঙ্গে মুরাদনগরের গুঞ্জর গ্রামের ছেলেদের প্রথমে কথা–কাটাকাটি এবং পরে হাতাহাতি হয়। এ সময় সাবেক জনপ্রতিনিধি (মেম্বার) জুলহাস মিয়া দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ মিটিয়ে দেন। একই সঙ্গে গানবাজনা বন্ধ করে দেন।

এক পর্যায়ে গুঞ্জর গ্রামের ছেলেরা মুঠোফোনে আরও কিছু ছেলেকে ডেকে আনেন। এরপর তাঁরা বিয়েবাড়ি থেকে প্রায় ৫০০ গজ দূরে পার্শ্ববর্তী দেবীদ্বারের রসুলপুর ইউনিয়নের জীবনপুর গ্রামের ইনসাফ মার্কেটের সামনে জড়ো হন। এ সময় দুই গ্রামের ছেলেদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে ঘটনাস্থলেই ছুরিকাঘাতে মারা যান গুঞ্জর গ্রামের আবু হানিফের ছেলে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাহিম হাসান। এ ছাড়া বুকে ছুরিকাঘাতে মারাত্মক আহত হন আবদুল্লাহপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম, গুঞ্জর গ্রামের মো. জয়দল হোসেন মোল্লার ছেলে মো. আক্তার হোসেনের (১৬) পেটের ভুঁড়ি বেরিয়ে যায়, একই গ্রামের মজিবুর রহমানের ছেলে মো. মামুনুর রশিদের (২০) বুক ও পেটে ছুরিকাঘাত করা হয় এবং আবদুস সালামের ছেলে মো. সজিবের (১৩) কণ্ঠনালি কেটে যায়। পরে তাঁদের দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিত্সক আলমগীর হোসেন সাইফুলকে মৃত ঘোষণা করেন। অপর তিনজনকে প্রাথমিক চিকিত্সা দিয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে তাঁদের উন্নত চিকিত্সার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। অন্যরা প্রাথমিক চিকিত্সা নিয়ে বাড়ি ফেরেন।

প্রবাসী মো. জাকির হোসেনের স্ত্রী ও কনের মা সেলিনা আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী মো. জাকির হোসেন ওমানপ্রবাসী। আমার মেয়ের সঙ্গে গত বছরের ২৪ জুলাই দেবীদ্বারের বুড়িরপাড় গ্রামের আবদুল মতিন মিয়ার ছেলে হোসাইনের বিয়ে হয়। কনেকে স্বামীর কাছে তুলে দিতে বুধবার গায়েহলুদের অনুষ্ঠান করি। বৃহস্পতিবার বরযাত্রী আসার কথা ছিল। মেয়েকেও স্বামীর বাড়ি তুলে দেওয়ার জন্য বাজার করা হয়। আত্মীয়স্বজনকে নিমন্ত্রণ জানানো হয়। গত রাতে একটি অশুভ শক্তির অপতত্পরতায় বিয়ের আনন্দ নিমেষেই মাটি হয়ে গেল। পুলিশ এসে সব আয়োজন বন্ধ করে দিয়ে আমার স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায়।’

গুঞ্জর গ্রামের নিহত রাহিমের বাবা আবু হানিফ বলেন, ‘আমার ছেলেকে বিয়েবাড়ির আনন্দ–উত্সবে নাচতে নিয়ে গিয়েছিল তাঁর বন্ধু সাইফুল। সাইফুলও মারা গেল সঙ্গে আমার ছেলেও মরল, কেন এমনটা হলো। আমি এর বিচার চাই।’

সাইফুলের মা আউলিয়া আক্তার বলেন, ‘কয়েক দিন পরই সাইফুলের সৌদি আরবে যাওয়ার কথা ছিল। বহু কষ্ট করে ছেলেকে বিদেশ পাঠানোর কাগজ তৈরি করেছিলাম। এখন আমার সবই গেল। আমি এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’

এদিকে ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কনের বাবা আবদুল্লাহপুর গ্রামের জাকির ও জীবনপুর গ্রামের বাছির মিয়াকে (২৫) থানায় নিয়ে আসে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিকেল পর্যন্ত তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

দেবীদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুর রহমান বলেন, বিয়ের গায়েহলুদ অনুষ্ঠানে নাচগানের সময় ইভটিজিংয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাগ্‌বিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। পরে বিয়েবাড়ি থেকে প্রায় ৫০০ গজ দূরে ইনসাফ মার্কেটে গিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। আহত ব্যক্তিদের চিকিত্সার জন্য হাসপাতালে পাঠায়। বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। দুপুরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহরিয়ার আলম মিয়াজী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। লাশ দাফনের পর মামলা হবে।