নিরাপদ পানির খোঁজে সিলেটের বন্যাদুর্গতরা

একটি মসজিদ থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করেন বেলাল আহমদ (৬০) নামে এক ব্যক্তি। মঙ্গলবার দুপুরে সিলেটের শাহজালাল উপশহরের ডি ব্লকে
ছবি: প্রথম আলো

পরিবারের ১০ সদস্য মিলে গত ছয় দিন বৃষ্টির পানি পান করেছেন। জমানো পানি শেষ। এখন দরকার বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি। এ জন্য ঘরের বাইরে বের হয়ে পানির খোঁজে সড়কে হাঁটাহাঁটি করছিলেন সিলেটের শাহজালাল উপশহরের অহিদুল আলম (৭০)।

আজ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপশহরের ডি ব্লকের ২৩ নম্বর সড়কে কথা হয় অহিদুলের সঙ্গে। বলছিলেন, ‘এত দিন ঘরে পানি আছিল কোমরসমান। এখন ঘরো হাঁটুসমান পানি। বাসার সামনে কোমরসমান। পানি তোলার মোটর নষ্ট। ছয় দিন ধরি ঘরো বিদ্যুৎ-পানি কিৎছু নাই।’

দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত শাহজালাল উপশহর এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, পুরো উপশহরই পানির নিচে তলিয়ে। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে দোকানপাট, ব্যাংক, বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে পানি উঠেছে।

সকাল থেকে বৃষ্টি না থাকায় পানি স্থির অবস্থায় আছে। ধীরে ধীরে নামছে। শাহজালাল উপশহরের সড়ক দিয়ে নৌকা, রিকশা, ভ্যান চলাচল করছে। মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত কয়েকটি অটোরিকশা চলাচল করলেও কয়েকটি সড়কের মাঝপথে আটকে যেতে দেখা গেল। ট্রাকে করে পরিবহন করা হচ্ছিল পানি ও মালামাল।

উপশহরের ডি ব্লকের ২৩ নম্বর সড়কে কথা হয় বাসিন্দা নোমান আহমদের (৩২) সঙ্গে। বললেন, সোনাপাড়া এলাকার মসজিদ থেকে ভ্যানে করে পানি এনে ব্যবহার করা হচ্ছে। চাহিদা মেটাতে বোতলজাত পানি পান করছেন।

ডি ব্লকের ১৪ নম্বর বাসায় ঘর থেকে পানি বের করছিলেন জাকির হোসেন (৩৫)। এ সময় তাঁকে সহযোগিতা করছিলেন আবদুল খালিক (৪০)। তাঁরা বলেন, পানি বাড়তে দেখে গত বৃহস্পতিবার বাঁধ দিয়েছিলেন। কিন্তু শুক্রবার বাঁধের ওপর দিয়ে ঘরে পানি ঢোকে। এতে একটি ফ্রিজ, পালঙ্কের ওপর বিছানো তোশক, বালিশ পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে।

উপশহরের এ ব্লকের একটি সড়কে জাল ফেলে হাঁটুপানিতে মাছ ধরার চেষ্টা করছিলেন নাইমুর রহমান নামের এক যুবক। তিনি বলেন, এখানে আগে কোমরের ওপরে পানি ছিল। এখন জালে ছোট মাছ পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান নাইমুর।

পানি বৃদ্ধির কারণে গত শুক্রবার বাসা ছেড়ে নিরাপদ স্থানে যাওয়া ইমরাজ আলী আজ বাসায় ফিরেছেন। তিনি এ ব্লকের ৪ নম্বর সড়কের বাসিন্দা। বললেন, ‘এখন আমরা ত্রাণ কিংবা অন্য কিছু চাই না। বিদ্যুৎ আর পানি চাই। পানি তোলার পাম্প তলিয়ে গিয়ে অকেজো হয়ে গেছে। এখন বিদ্যুৎ এলে পানি তোলবো, সে ব্যবস্থাও নেই।’