Thank you for trying Sticky AMP!!

পদ্মায় ধরা পড়ছে প্রচুর ইলিশ, দামও কমেছে

ইলিশের দাম কমায় মুন্সিগঞ্জের মাওয়া আড়তে বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে। গতকাল সকালে মাওয়া আড়তে পদ্মার টাটকা ইলিশ

নিষেধাজ্ঞা না থাকায় মুন্সিগঞ্জের পদ্মা নদীতে মাছ ধরছেন জেলেরা। তাঁদের জালে ধরা পড়ছে প্রচুর ইলিশ। সরবরাহ বেশি থাকায় গত সপ্তাহের তুলনায় দাম কমেছে। দাম কমায় বিক্রির পরিমাণও বেড়েছে।

মাওয়া মৎস্য আড়ত সূত্রে জানা গেছে, মাওয়ায় মোট ৩২ জন আড়তদার আছেন। এ আড়তগুলোতে লৌহজং, শরীয়তপুর, মাদারীপুরের শিবচর, নড়াইলের মহাজন, পাবনা, চাঁদপুর ও সিরাজগঞ্জের অন্তত ১০ হাজার জেলে মাছ বিক্রি করতে আসেন।

সোয়া থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ আগে প্রতি কেজি বিক্রি হতো ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। সেই ইলিশ এখন ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি আকৃতির ৬০০ থেকে ৯০০ গ্রামের ইলিশ আগে ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ৯০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

জেলা মৎস্য কার্যালয় জানায়, মুন্সিগঞ্জের লৌহজং, শ্রীনগরের ভাগ্যকুল ও সদর উপজেলার কিছু অংশ মিলিয়ে প্রায় ৩০ কিলোমিটারজুড়ে পদ্মা নদী। সদর ও গজারিয়া উপজেলার ৩৫ কিলোমিটার এলাকায় মেঘনা নদী। এসব বিস্তীর্ণ নদীর গভীর থেকে ইলিশ আহরণ করে থাকেন জেলেরা। জেলায় ইলিশ ধরার জেলে আছেন তিন হাজার ছয় শতাধিক।

স্থানীয় বাসিন্দা তাহমিদ রুবেল প্রথম আলোকে বলেন, মাওয়া মৎস্য আড়তগুলোতে ছোট, বড় ও মাঝারি আকৃতির ইলিশে সয়লাব। সকালে ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে মুখরিত হয় আড়ত এলাকা। গত তিন থেকে চার দিনে প্রচুর বেচাকেনা হচ্ছে। পাইকারি ও খুচরা—বিভিন্নভাবে মাছ বিক্রি হচ্ছে। তাঁদের বাড়ি আড়তের কাছাকাছি হওয়ায় দূরের আত্মীয়স্বজন তাঁর মাধ্যমে প্রতিদিন মাছ কিনে নিয়ে যান বলে জানান তিনি।

পদ্মা নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। ইলিশ কিনতে আড়তে ভিড় করছেন খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা

আড়তের ব্যবসায়ীরা জানান, সোয়া থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ আগে প্রতি কেজি বিক্রি হতো ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। সেই ইলিশ এখন ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি আকৃতির ৬০০ থেকে ৯০০ গ্রামের ইলিশ আগে ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ৯০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরবরাহ ভালো থাকায় গত সপ্তাহে এসব মাছের দাম কেজিতে কমেছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। দাম কমায় ক্রেতাদের উপস্থিতিও বেশ ভালো।

পদ্মার জেলে মোখলেছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদীর গভীরে গিয়ে আমরা ইলিশ শিকার করি। নদীতে এখন ছোট–বড় সব আকারের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। দাম আগের চেয়ে কিছু কমেছে। তবে মাছ বেশি পাওয়ায় ভালোই পুষিয়ে যাচ্ছে।’

গত তিন থেকে চার দিনে আড়তে বিভিন্ন আকারের প্রচুর ইলিশ মাছ আসছে। মাছের দামও কেজিতে দুই থেকে তিন শ টাকা কমেছে। প্রতিদিন সকাল থেকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ স্থানীয় বিভিন্ন বাজারের পাইকারসহ দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারা আড়তে আসছেন।
হামিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক, মাওয়া মৎস্য আড়ত ব্যবসায়ী সমিতি

কার্তিক অ্যান্ড গণেশ ইলিশ মৎস্য আড়তের মালিক কার্তিক দাস প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের আড়তে শুধু ইলিশ মাছ বিকিকিনি হয়। আড়তে এখন প্রচুর ইলিশ মাছের আমদানি হচ্ছে। কয়েক দিন আগেও তাঁদের আড়তের খরচ ওঠাতে কষ্ট হয়ে যেত। বর্তমানে সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা আয় করতে পারছেন।

খুচরা মাছ বিক্রেতা মো. জালাল মৃধা বলেন, মাওয়া আড়তে এখন সব পদ্মার ইলিশ। দিনরাত জেলেরা মাছ ধরে ভোরে আড়তে বিক্রি করতে আসছেন। এখন প্রচুর ইলিশ মাছ আসছে। রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা তারা মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘টাটকা ইলিশ কেনার জন্য শনিবার ভোরে আড়তে এসে মাছ কিনেছি। চার দিন আগে যে মাছ পাঁচ হাজার টাকায় কিনেছি, গতকাল (শনিবার) সেই আকৃতির মাছ চার হাজার টাকায় কিনেছি। দাম কম থাকায় আগের চেয়ে বাজারে ভিড় বেড়েছে।’

ইলিশ কিনতে আড়তে ভিড় করছেন খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা। লৌহজং মৎস্য আড়তে

মাওয়া মৎস্য আড়ত ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হামিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মাওয়ায় ৩২টি আড়ত রয়েছে। গত তিন থেকে চার দিনে আড়তে বিভিন্ন আকারের প্রচুর ইলিশ মাছ আসছে। মাছের দামও কেজিতে দুই থেকে তিন শ টাকা কমেছে। পদ্মার ইলিশের ব্যাপক চাহিদা। প্রতিদিন সকাল থেকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ স্থানীয় বিভিন্ন বাজারের পাইকারসহ দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারা আড়তে আসছেন।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শামসুল করিম গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় পদ্মায় ইলিশ বেড়েছে। এ ছাড়া অভয়াশ্রমের জন্য ১ মার্চ থেকে সাগরের কাছাকাছি পদ্মা নদীতে মাছ ধরা ও জাল ফেলায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ কারণে মাছ সাগর থেকে পদ্মা নদীতে চলে এসেছে। এতে মুন্সিগঞ্জ অংশে আগের চেয়ে বেশি ইলিশ ধরা পড়ছে। তিনি বলেন, জাটকা ধরা বন্ধ হলে মাছ আরও বাড়বে। তাই জেলেদের স্বার্থেই ২৫ সেন্টিমিটারের নিচে সব ধরনের জাটকা ধরা থেকেও বিরত থাকতে হবে।