Thank you for trying Sticky AMP!!

বউভাতের অনুষ্ঠানে বরের জানাজা, কনে হাসপাতালে

বিয়ের সাজে মো. রফিকুল ইসলাম। গত সোমবার তোলা ছবি

বউভাত অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি শেষ। গেট সাজানো থেকে শুরু করে অতিথিদের জন্য মোরগ পোলাও, পায়েস—সবই রান্না হয়ে গেছে। কনেপক্ষের অতিথিরাও গাড়িবহর নিয়ে বরের বাড়িতে। তাঁদের আপ্যায়নের প্রস্তুতি চলছে। এমন সময় খবর এল, বর মারা গেছেন। এই খবরে বউভাতের অনুষ্ঠানে আনন্দোচ্ছ্বাস পরিণত হলো বিষাদে। পরে বউভাতের অনুষ্ঠানের প্যান্ডেল প্রস্তুত হতে থাকে বরের লাশ গ্রহণ করে জানাজা-দাফন-কাফনের জন্য। এ সময় স্বজনদের কান্নায় আকাশ ভারী হয়ে ওঠে।

এমন হৃদয়বিদারক ঘটনাই ঘটেছে গতকাল বুধবার বিকেলে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে। উপজেলার মাধবখালী ইউনিয়নের বাজিতা গ্রামের মো. সফিজ উদ্দিন হাওলাদারের ছেলে মো. রফিকুল ইসলামের (২৫) আকস্মিক এই মৃত্যুর খবরে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। যেখানে বউভাত অনুষ্ঠানের অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য প্যান্ডেল সাজানো হয়েছিল, সেখানেই বুধবার বিকেলে পড়ানো হয় রফিকুলের জানাজা। এদিকে নববধূ স্বামীর অকালমৃত্যুর খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তাঁকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

স্বজন ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দুই দিন আগে গত সোমবার বরগুনার বেতাগী উপজেলার বাসন্ডা গ্রামের আবদুল মান্নান হাওলাদারের মেয়ে ময়না আক্তারের (১৮) সঙ্গে রফিকুলের বিয়ে হয়। রেওয়াজ অনুযায়ী বিয়ের তৃতীয় দিন বুধবার আয়োজন করা হয় বউভাতের। অনুষ্ঠানের আগের দিন মঙ্গলবার রাত থেকে কিছুটা জ্বর ও পেটব্যথায় অসুস্থ বোধ করায় বুধবার সকালে রফিকুলকে বরিশালের শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা তিনটার দিকে মারা যান তিনি।

গত সোমবার রফিকুলের বিয়ে হয়। পরদিন মঙ্গলবার রাতে রফিকুলের পেটে ব্যথা হয় এবং শরীরে সামান্য জ্বর ছিল। চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার আগেই তিনি মারা যান।

বিকেলে হাসপাতাল থেকে রফিকুলের লাশ বাড়িতে আনা হলে স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ। অবশেষে বউভাতের জন্য তৈরি করা প্যান্ডেলেই বিকেল পাঁচটার দিকে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় রফিকুলকে।

জানাজায় অংশ নেওয়া মাধবখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মনিরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, দাওয়াত ছিল বউভাতের। কিন্তু সেখানে পড়তে হলো জানাজা। এমন মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছেন না।

দাওয়াত ছিল বউভাতের। কিন্তু সেখানে পড়তে হলো জানাজা। এমন মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছেন না।
মো. মনিরুল ইসলাম তালুকদার, মাধবখালী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান

রফিকুলের চাচা মো. আনসার উদ্দিন বলেন, ‘বউভাতের অনুষ্ঠানে দেড় শ লোকের আয়োজন ছিল বাড়িতে। রান্নাবান্না সবই শেষ করে পরিবেশনের সময় শুনতে পাই রফিকুল মারা গেছে। মঙ্গলবার রাতে রফিকুলের পেটে ব্যথা হয় এবং শরীরে সামান্য জ্বর ছিল। চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার আগেই সে মারা যায়। নববধূ ময়না আক্তার স্বামীর মৃত্যু খবরে অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সে বর্তমানে ভালো আছে।’

আনসার উদ্দিন জানান, রফিকুলের বউভাতের অনুষ্ঠানে অতিথিদের জন্য রান্না করা খাবার পরে স্থানীয় মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। রফিকুল তাঁর মা–বাবার একমাত্র ছেলে ছিলেন। তাঁর দুটি বোন আছে। বাবা চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে রেকর্ড অফিসে কর্মরত।

কনের বাবা আবদুল মান্নান হাওলাদার আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার মেয়ের জীবনে এমন একটা ঘটনা ঘটে গেল। তাঁদেরও একমাত্র ছেলে। আমাদেরই কী সান্ত্বনা দেবে, তাঁদেরই বা কী সান্ত্বনা দেব। আমার বলার কোনো ভাষা নেই।’