বাদীকে আসামিপক্ষের আইনজীবীর জেরা শুরু

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে দ্বিতীয় দিন সাক্ষ্য দিতে যাচ্ছেন সিনহা হত্যা মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। মঙ্গলবার সকালে
ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে শুরু হয়েছে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্য গ্রহণ। মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌসকে হত্যাকাণ্ডের নানা বিষয়ে জেরা করছেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। সোমবার একই আদালতে তিনি ঘটনার বিষয়ে সাক্ষ্য দেন আদালতকে। ওই দিন রাষ্ট্রপক্ষের তিনজন এবং আসামিপক্ষের নয়জন আইনজীবী সাক্ষ্য ও জেরায় অংশ নিয়েছিলেন।

সাক্ষ্য দিতে গিয়ে নিহত সিনহা মো. রাশেদের বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস আদালতকে বলেন, টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশের নির্দেশে পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীর গুলিতে খুন হন সিনহা মো. রাশেদ। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীর কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ জেনে গত বছরের ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি। এ হত্যাকাণ্ড ছিল পূর্বপরিকল্পিত। তিনি অভিযুক্ত ১৫ আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন আদালতের কাছে।

বুধবার পর্যন্ত টানা তিন দিনে মোট ১৫ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের কথা রয়েছে। সাক্ষ্য গ্রহণের সময় আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন মামলার অন্যতম আসামি প্রদীপ কুমার দাশ, লিয়াকত আলীসহ ১৫ আসামি। আদালত পরিচালনা করেন জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল।

আদালত সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও আদালতের পিপি ফরিদুল আলমের সঙ্গে এজলাসে প্রবেশ করেন মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। এরপর শুরু হয় সাক্ষ্য গ্রহণ। প্রথমে জেরা শুরু করেন প্রদীপ কুমার দাশের আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত। এরপর জেরায় অংশ নেন লিয়াকত আলীর আইনজীবী চন্দন দাশ। জেরার একপর্যায়ে বেলা সোয়া দুইটার দিকে আদালতের কার্যক্রমে এক ঘণ্টার জন্য বিরতি দেন বিচারক। বেলা সাড়ে তিনটায় সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা পুনরায় শুরু হয়।

দুপুরের বিরতিতে এসে আদালত প্রাঙ্গণে প্রদীপের আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত সাংবাদিকদের বলেন, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রদীপ কুমার দাশ মোটেও জড়িত ছিলেন না। তিনি আদালতের কাছে সেটাই প্রমাণের চেষ্টা করছেন। এ বিষয়ে মামলার বাদীকে জেরা করা হয়েছে। আদালতের ওপর তাঁর আস্থাও অনেক। তিনি আশা করছেন, আদালতের কাছে তিনি ন্যায়বিচার পাবেন।

বিচারকাজে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা বলেন, শারমিন শাহরিয়ার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলে আদালত দ্বিতীয় সাক্ষী হিসেবে ঘটনার সময় সিনহার সঙ্গে থাকা ভিডিও দলের সদস্য সাহেদুল ইসলাম সিফাতের সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরার সুযোগ দিতে পারেন আদালত। সাহেদুল সকাল থেকেই আদালতে। এ মামলার মোট সাক্ষী ৮৩ জন।

দেখা গেছে, সকাল সোয়া নয়টার দিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে প্রিজন ভ্যানে করে আদালত প্রাঙ্গণে আনা হয় সিনহা হত্যা মামলার ১৫ আসামিকে। তাঁরা হলেন পুলিশের তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী, কনস্টেবল রুবেল শর্মা, এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুল করিম, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া ও কনস্টেবল সাগর দেবনাথ; আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজিব ও মো. আবদুল্লাহ এবং টেকনাফের বাহারছড়ার মারিশবুনিয়া গ্রামের তিন ব্যক্তি নুরুল আমিন, মো. নিজাম উদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।

আদালত সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি (টেকনাফে দুটি, রামুতে একটি) মামলা করে। পুলিশের মামলায় ঘটনার সময় সিনহার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর সিনহা যেখানে ছিলেন, হিমছড়ির নীলিমা রিসোর্টে ঢুকে তাঁর ভিডিও দলের দুই সদস্য শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত নুরকেও আটক করে পুলিশ। পরে নুরকে ছেড়ে দিলেও শিপ্রা ও সাহেদুলকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। পরে তাঁরা জামিনে মুক্তি পান।

ঘটনার পাঁচ দিন পর, অর্থাৎ ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার বহিষ্কৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া। চারটি মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় র‌্যাব।

২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও র‍্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম।

গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে প্রদীপ ও রুবেল শর্মা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। এর আগে আসামিদের তিন দফায় ১২ থেকে ১৫ দিন রিমান্ডে আনা হয়েছিল।