কার জয়ের সম্ভাবনা বেশি, তা নিয়ে আলোচনা কম। বরং কোন প্রার্থী বেশি টাকা খরচ করছেন, সে কথা ভোটারদের মুখে মুখে।

‘এ্যায় ৩০০ টাকা করি দিয়া গেল, এখন এ্যাক এ্যালা ৪০০ টাকা করি নে দৌড়াবা নাগোছে। মাগরিবের আজানটা দিলে এইঠে না একটা করি লোক একখান করি স্লিপ। কেহ ৩০০ কেহ ৪০০, যায় যেরং করি পারোছে প্রার্থীর ঠেনা টাকা নেওছে। এই ঠেনায় চারজন চেয়ারম্যানের পাঁচটা অফিস আছে।’
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের বুদার মোড় এলাকায় চায়ের দোকানে বসে কথাগুলো বলছিলেন আবদুল জলিল। পাশে বসা ষাটোর্ধ্ব রহমত আলীসহ আরও কয়েকজন ভোটার। শুধু বুদার মোড় নয়, মেলাবাড়ি, বারইহাট, রাঙামাটিসহ বিভিন্ন এলাকার চায়ের দোকানের আড্ডার বিষয় নির্বাচন।
এই উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। নির্বাচন ঘিরে প্রার্থীরা ছুটছেন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি। তবে চায়ের দোকানের উত্তপ্ত আলোচনায় মানুষ সরগরম হলেও ভোট দেওয়া ও প্রার্থী বাছাইয়ের আলোচনা নেই। যত আলোচনা প্রার্থীরা কে কেমন টাকা খরচ করছেন, কার কত টাকা আছে—এসব নিয়ে।
ইউনিয়নের মালচি গ্রামে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সদস্য প্রার্থী বলেন, মানুষ এখনো কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি। কিন্তু ভোটাররাও এখন বুঝে গেছেন যে ভোট শেষ হলে জনপ্রতিনিধিদের দেখা পাওয়া যাবে না। তাই ভোটের সময়ই যে যেমন পারছেন প্রার্থীদের কাছ থেকে নিয়ে নিচ্ছেন।
চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী চারজন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সুকান্ত সরকার। প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীক পেয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তিনি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আনারস প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মোজাফফর হোসেন সরকার। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য। এ ছাড়া জামায়াত–সমর্থিত মোটরসাইকেল প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উত্তর রঘুনাথপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপার হাবিবুর রহমান ও চশমা প্রতীকে রাঙামাটি ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষক নাসমুশ সাখির।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে আলাদিপুর ইউনিয়নের বুদার মোড়, রাঙামাটিসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাস্তার মোড়ে মোড়ে ব্যানার আর পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। সাইকেল-রিকশা-মোটরসাইকেলে ছোট ছোট ফেস্টুন নিয়ে ঘুরছেন প্রার্থীর সমর্থকেরা। মাইকে বাজছে নির্বাচনী প্রচারণাসংক্রান্ত নানা ধরনের গান। চায়ের দোকানে বসে গল্পগুজবে মেতে আছেন ভোটাররা।
বুদার মোড় এলাকায় কয়েকজন ভোটার জানান, চেয়ারম্যান প্রার্থী চারজনের মধ্যেই লড়াই হবে। তবে মূল লড়াই হবে বিদ্রোহী প্রার্থীর সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীর। পরপর দুবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। এলাকায় তাঁর জনপ্রিয়তা ও কর্মী অনেক। অন্যদিকে স্বতন্ত্র ও নতুন প্রার্থী হলেও জনসংযোগে এগিয়ে আছেন চশমা প্রতীকের প্রার্থী। জামায়াত–সমর্থিত প্রার্থী হাবিবুর সম্পর্কে ভোটারদের বক্তব্য, ইউনিয়নে হিন্দু ভোটারদের আধিক্য থাকলেও জামায়াতের কিছু স্থায়ী ভোট আছে। আর আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি নন এসব ভোটার।
এই ইউনিয়নে মোট ভোটার ১৫ হাজার ৮৮৬ জন। সংরক্ষিত সদস্য পদে ১১ ও সাধারণ সদস্য পদে ৩৬ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।