Thank you for trying Sticky AMP!!

মর্জিনা যেন সাফল্যের প্রতিচ্ছবি

গ্রামের নারীদের সংসারের কাজের অবসরে পুঁথির ও প্লাস্টিকের তৈরি ব্যাগ ও ওয়ালম্যাট তৈরির কাজ শিখিয়ে দিচ্ছেন মর্জিনা খাতুন (মাঝে)। গত রোববার তোলা। ছবি: প্রথম আলো

দুপুর গড়িয়ে তখন বিকেল। বগুড়ার শেরপুরের মির্জাপুর ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামের মূল সড়ক থেকে নেমে জমির আইল ধরে যেতে যেতে চোখে পড়ে টিনশেডের পাকা বাড়িটা। বাড়ির প্রধান ফটক থেকে একটু ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন নারী হাতে তৈরি করছেন পুঁথির ব্যাগ, ওয়ালম্যাট, ফুলের টবসহ নানা জিনিসপত্র। হস্তশিল্পের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে তাঁরা এখন স্বাবলম্বী। এ কাজে তাঁদের নেতৃত্ব দিয়েছেন মর্জিনা খাতুন।

সেলাই ও হস্তশিল্পের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে মর্জিনা এখন মাসে আয় করেন ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। গ্রামের অন্য নারীদেরও স্বাবলম্বী করার পথ দেখিয়েছেন তিনি। অবসর সময়ে তাঁদের প্রশিক্ষণ দেন মর্জিনা। এ পর্যন্ত অন্তত ৫০০ নারী তাঁর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে টাকা আয় করছেন। পরিবার নিয়ে তাঁরা সুখে–স্বাচ্ছন্দ্যে আছেন।

গত শনিবার কথা হয় মর্জিনা খাতুনের সঙ্গে। এ সময় তিনি জানান তাঁর পরিশ্রম ও নানা অর্জনের কথা। মদনপুর গ্রামের কৃষক সুজির উদ্দিনের পাঁচ সন্তানের মধ্যে মর্জিনা রয়েছেন চার নম্বরে। মা জয়গুন বিবি গৃহিণী। ১৯৯৫ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় বিয়ে হয় মর্জিনার। শ্বশুরবাড়িও একই গ্রামে। স্বামী বাসচালকের সহকারী (হেলপার) ছিলেন। বিয়ের পর তাঁকে সইতে হয়েছে অসহ্য যন্ত্রণা। বড় বোন মেরিনা বেগমের সহায়তায় পোশাক তৈরির কাজ শিখেছেন।

মর্জিনা খাতুন বলেন, বিয়ের পর বাবা তাঁকে দুই বিঘা জমি দিয়েছিলেন। ওই জমির আয় থেকে জায়গা কিনে বসতবাড়ি গড়েন। ওই বাড়িতে স্বামীর সঙ্গে থাকতেন তিনি। স্বামীর সংসারে গেলেও লুকিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যান। স্থানীয় মাদ্রাসা থেকে ২০০০ সালে দাখিল পাস করেন। পরে উপজেলা যুব উন্নয়ন কার্যালয়ের সহায়তায় দুই বছরের প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০১০ সাল থেকে তিনি ইউনিয়ন তথ্যসেবা ও ডিজিটাল সেন্টারে কাজ করছেন। অবশেষে ২০১৩ সালে স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটান। পরের বছর আলিম পাস করেন মর্জিনা। ওই বছরই জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ–এর তালিকায় উপজেলা পর্যায়ে ২০১৪ সালে শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী নির্বাচিত হন। একই সঙ্গে তৃণমূল নারী উদ্যোক্তা হিসেবেও তালিকাভুক্ত হন।