
ভাগনের বিয়ে। এ উপলক্ষে আনন্দের কমতি নেই মামার বাড়িতে। তবে একটি বজ্রপাত সব আনন্দ বিষাদে ঢেকে দিল। চোখের সামনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার মহারাজনগর ডাইলপাড়া গ্রামের মাইদুল ইসলাম (৩৫) দেখলেন বজ্রপাতে বাবা, মা, ভাই-বোনসহ নিজের পরিবারের সাতজনের মৃত্যু।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের পদ্মা নদীর তেলিখাড়ি ঘাটে আজ বুধবার দুপুরে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এতে ১৭ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ১২ জন। শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাকিব-আল-রাব্বি এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিহত ১৭ জনের মধ্যে আছেন মাইদুল ইসলামের বাবা মো. তোবজুল (৭০), মা জমিলা বেগম (৬০), ভাই মো. সাইদুল (৪০), ভাবি টকিয়ারা বেগম (৩০), ভাতিজা মো. বাবু (১৫), বোন লেতন বেগম (৪৫) ও ভাগনে মো. বাবলু (২২)।
আজ বিকেল চারটার দিকে মাইদুল ইসলামের ডাইলপাড়া গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘটনার আকস্মিকতায় একটি ঘরে তিনি নির্বাক হয়ে বসে আছেন। পাড়া-প্রতিবেশীরা মৃত্যুর খবর শুনে তাঁর বাড়িতে ভিড় জমিয়েছেন। এই গ্রামে একসঙ্গে এত মানুষের মৃত্যু আগে কেউ দেখেননি। স্বজন আর প্রতিবেশীদের কান্না-আহাজারি বাড়িজুড়ে। একে একে যখন সাতটি লাশ নিয়ে আসা হলো, সেই কান্নার শব্দ যেন পুরো গ্রামে ছড়িয়ে পড়ল। বাড়ির পাশে একে একে খোঁড়া হয় ৬টি কবর। কিশোর ভাতিজা বাবু ছাড়া মাইদুলের পরিবারের মৃত ছয়জনকে সেখানে কবর দেওয়ার ব্যবস্থা হয়।
বজ্রপাতের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চার দিন আগে সদর উপজেলার জনতার হাট গ্রামের শরিফুল ইসলামের ছেলে মো. মামুনের সঙ্গে শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের তেরোরশিয়া গ্রামের হোসেন আলীর মেয়ে সুমি খাতুনের বিয়ে হয়। মাইদুল ইসলামের ভাগনে হলেন বর মামুন। আজ বর ও কনেকে আনতে পদ্মা নদী দিয়ে নৌকায় করে কনের বাড়িতে যাচ্ছিলেন বরপক্ষের লোকজন। দুপুর ১২টার দিকে তাঁরা পাঁকা ইউনিয়নের পদ্মা নদীর তেলিখাড়ি ফেরিঘাটে পৌঁছান। বৃষ্টির কারণে নৌকা থেকে একে একে নেমে ঘাটের পাশে ছাউনির নিচে আশ্রয় নিচ্ছিলেন তাঁরা। এ সময় বজ্রপাত হয়। ঘটনাস্থলেই ১৭ জনের মৃত্যু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে জানা যায়, অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচেন মাইদুল ইসলাম ও তাঁর ১০ বছরের মেয়ে সুমাইয়া খাতুন। নৌকা থেকে নামতে একটু দেরি হওয়ায় বাবা-মেয়ে ছাউনি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেননি। আর সেই মুহূর্তেই বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। চোখের পলকে বাবা-মাসহ প্রিয়জনদের মৃত্যু দেখে শোকে নির্বাক হয়ে আছেন মাইদুল।
মৃত বাকি ১০ জন হলেন বর মামুনের বাবা সদর উপজেলার জনতার হাট গ্রামের শরিফুল ইসলাম (৪২), চাচাতো ভাই ধুলু মিয়ার ছেলে মো. সজিব (২২), দুলাভাই গোঠাগ্রামের মো. সোহবুল (৩৫), ফুফু বেলিয়ারা বেগম (৩৪), ফুপা টিপু সুলতান (৪০); একই গ্রামের বরপক্ষের যাত্রী মো. আলম (৪৫), মো. পাতু (৪০), মো. শাহালাল ওরফে বাবুর স্ত্রী মোসা. মৌসুমী (২৫), পাশের সুন্দরপুর গ্রামের সেরাজুল ইসলামের ছেলে আসিকুল ইসলাম (২৪) এবং বরপক্ষের বাইরে মো. রফিক (৫০) নামে ফেরিঘাটে উপস্থিত শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা গ্রামের একজন।