মেলা বসছে না, তাঁদের মুখ মলিন
এবারের পয়লা বৈশাখ ও বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে প্রস্তুতি থাকলেও লকডাউনে পালপাড়ায় চলছে নীরবতা।
মাটির নানা জিনিস বানিয়ে বৈশাখী মেলার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন মৃৎশিল্পী হরিদাশ পাল, সুধীর পাল, কৃতীশ পালরা। শুধু কিছু জিনিসের রঙের কাজটা বাকি ছিল। হঠাৎ লকডাউনের কারণে কোথাও বৈশাখী মেলার আয়োজন হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার ষাটধার পালপাড়ার বাসিন্দাদের মুখ মলিন হয়ে গেছে। অনেকের মতো লকডাউনে তাঁরাও পড়েছেন বিপাকে।
পালপাড়ার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এমনিতেই পালবাড়ির চাকা আর আগের মতো ঘোরে না। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে এ শিল্প। যে এলাকায় হাজারো পরিবার এ পেশায় জড়িত ছিল, সেখানে এখন মাত্র অল্প কয়েকটি পরিবার পেশাটিকে আঁকড়ে ধরে আছে। প্রতিবছর বৈশাখ এলেই চলত নানা প্রস্তুতি।
গত শনিবার সরেজমিনে নিকলীর পালপাড়ায় মৃৎশিল্পী হরিদাশ পাল, সুধীর পাল, কৃতীশ পাল, সজনী রানী পাল, শিক্ষার্থী ঐশী পালসহ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, এবারও বৈশাখী মেলার অপেক্ষায় ছিলেন নিকলীর পালপাড়ার ৩২টি পরিবার। তাদের বেশির ভাগই প্রতিবছর পয়লা বৈশাখের জন্য মাটির জিনিসপত্র বানিয়ে প্রতীক্ষায় থাকত। মেলা বসলে তারা খেলনা, হাঁড়িপাতিল, পুতুল, ফুলের টবসহ টুকিটাকি নানা তৈজসপত্র নিয়ে পসরা সাজাত। কিন্তু এবারের পয়লা বৈশাখ ও বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে প্রস্তুতি থাকলেও লকডাউনে পালপাড়ায় চলছে নীরবতা।
আগে কিছুটা চলতে পারলেও করোনার কারণে দুই বছর ধরে তাঁদের করুণ দশা—বলছিলেন হরিদাশ পাল। তিনি বলেন, পয়লা বৈশাখে মাটির খাবারের বাসন-সানকির চাহিদা বাড়ে। সানকিতে পান্তা ভাত খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। সে জন্য প্রতিবছরই এ সময় প্রচুর বাসন তৈরি করেন তাঁরা। এ ছাড়া সারা বছরে তেমন কোনো চাহিদা না থাকলেও এ সময় ফুলের টব, শোপিস, খেলনার সামগ্রী, মাটির ব্যাংক ইত্যাদি তৈরি করেন।
শান্ত পাল, কাজল পাল, নিয়তী রানী পালসহ আরও কয়েকজন বলেন, আগে এ পাড়ায় কয়েক শ পরিবার মৃৎশিল্পের কাজে জড়িত ছিল। এখন এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত পরিবার কমে ৩২টিতে দাঁড়িয়েছে। অনেকে এ পেশা ছেড়ে হয়েছেন শিল্পকারখানার শ্রমিকসহ নানা পেশাজীবী। চাহিদা কমে যাওয়ায় এ পেশায় আজ টিকে থাকাই দায় হয়েছে। এরপরও পয়লা বৈশাখকে ঘিরে টুকিটাকি কাজ করলেও এবার তাঁদের দুরবস্থা। এভাবে চলতে থাকলে একদিন হারিয়ে যাবে এই পেশা। তাই তাঁরা সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।
এ ব্যাপারে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. শহীদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মৃৎশিল্পীদের দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণ শেষে তাঁদের ১৮ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়। তাঁদের হিসাবমতে, জেলায় ৫৭০টি মৃৎশিল্প পরিবারের প্রায় ২ হাজার লোক এ শিল্পের সঙ্গে এখনো জড়িত। এর মধ্যে এ পর্যন্ত সমাজসেবা কার্যালয়ের পক্ষ থেকে ২৮৭ মৃৎশিল্পীকে প্রশিক্ষণ শেষে অনুদান দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যদেরও এ প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে।