রামছাগলসহ হরেক রকম ছাগলের মেলা

সিলেটে লালু নামের ছাগল নিয়ে প্রদর্শনীতে এসেছেন এক মালিক। ছবিটি শনিবার তোলা
ছবি: প্রথম আলো

সিলেট নগরের মির্জাজাঙ্গাল এলাকার জেলা ভেটেরিনারি হাসপাতালের সামনে বসেছে ছাগলের মেলা। সেখানে ১৭টি স্টল সাজানো হয়েছে। প্রতিটি স্টলে রাখা হয়েছে একটি–দুটি করে ছাগল। স্টলে থেকে ছাগলদের দেখভাল করছেন মালিকেরা। আজ শনিবার প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রদর্শনীতে দেখা মিলল এমন চিত্রের।

স্টলগুলোর একটিতে দেখা গেল, গলায় ঘণ্টি বাঁধা দুটি ছাগল খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রেখেছেন সোহাগ চৌধুরী। ছাগল দুটির বাহারি শিং। খুঁটির সঙ্গে কাঁঠাল পাতা ঝুলিয়ে রেখে ছাগল দুটিকে খাওয়াচ্ছিলেন। সোহাগ নগরের সুবিদবাজার এলাকার বাসিন্দা। তিনি শখের বসে ছাগল, কবুতর পালন করেন। তিনি বলেন, হরিয়ানা জাতের ছাগল তিনি প্রায় পাঁচ বছর আগে নাটোর থেকে সংগ্রহ করেছিলেন। ব্যবসার উদ্দেশ্যে নয়, শখের বশেই ছাগলের জাতটি কিনে এনেছিলেন তিনি। এ জাতের ছাগল বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর পর এক লিটারের মতো দুধ পাওয়া যায়। হরিয়ানা জাতের পুরুষ ছাগলটি তিনি কিনেছিলেন ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় আর ছাগিটি কিনেছিলেন ৭৫ হাজার টাকায়।

নগরের শেখঘাট এলাকার বাসিন্দা আবদুল খালেক নিয়ে এসেছেন দুটি তোতাপুরি ও যমুনাপাড়ি জাতের ছাগল। সেগুলোকে তিনি কাঁঠাল পাতা খাওয়াচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ২০০৪ সালে একটি ছাগল দিয়ে তিনি ছাগল পালন শুরু করেন। এখন সেই উদ্যোগ অনেকটা খামারে পরিণত হয়েছে। এখন তাঁর ৩৩টি ছাগল। দেড় বছর বয়সের তোতাপুরি বছরে একবার বাচ্চা দেয়। একেকবার দুটি করে বাচ্চা দেয়।

নগরের বালুচর এলাকার বাসিন্দা কাজী মুহিবুর রহমান একটি ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের পাঁঠা নিয়ে স্টলে বসেছিলেন। বললেন, শখের বসে ও কিছুটা আয় হবে এমন ভাবনা থেকে ছাগল পালন শুরু করেছিলেন প্রায় ১০ বছর আগে। এখন তাঁর ৩৫টি ছাগল। প্রতিবছরই তিনি বেশ কয়েকটি ছাগল বিক্রি করেন বলে জানান। ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালনকালে একেকবারে চারটি পর্যন্ত বাচ্চা দিয়েছে। বছরে দুবার বাচ্চা হওয়ায় লাভ বেশি বলে তিনি জানান।

নগরের মিরাবাজার এলাকার বাসিন্দা বিমলেন্দু কুমার দাশ বলেন, তিনি গরু পালন করেন। সম্প্রতি ছাগল পালনও শুরু করেছেন। প্রদর্শনীতে তিনি দুটি রামছাগল এনেছেন। ছাগলটি একসঙ্গে তিনটি বাচ্চা দিলেও দুটি বাচ্চা মারা গেছে।

ছাগলের মেলা ঘুরে দেখছিলেন নগরের দাড়িয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ছাগল পালনের আগ্রহ আছে তাঁর। তবে কোন জাতের ছাগল পালবেন, তা বুঝতে পারছিলেন না। এখানে এসেছেন তথ্য জানতে। মেলায় ঘুরে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের পাশাপাশি তোতাপুরি জাতের ছাগল পালবেন তিনি।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সিলেট বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের পরিচালক মোহাম্মদ জাকির হোসেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. রুস্তম আলী, অতিরিক্ত জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, সিলেট ডেইরি ফামার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি আমজাদ হোসেন চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাকিলুজ্জামান। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন সিলেট সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুস শহিদ হোসেন। বক্তারা বলেন, দেশীয় জাতের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালন খুবই লাভজনক।

অনুষ্ঠান শেষে শ্রেষ্ঠ পাঁঠা পালনকারী হিসেবে কাজী মুহিবুর রহমান ও শ্রেষ্ঠ ছাগি পালনকারী হিসেবে সোহাগ চৌধুরীকে রঙিন টেলিভিশন পুরস্কার দেওয়া হয়।