শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চামটা গ্রামের মনি বেগম (৭৫)। স্বামী নেই, সন্তানেরাও কাছে থাকেন না। খাদ্যনালিতে সমস্যা থাকায় কয়েক দিন ধরে অসুস্থ। লকডাউনের কারণে সরকারি হাসপাতালে যেতে পারছিলেন না। এক আত্মীয়ের মাধ্যমে জানতে পারেন, গ্রামে চিকিৎসক আসবেন। আজ রোববার দুপুরে তিনি চামটা ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। সেখানে তাঁকে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পাশাপাশি ওষুধও দেওয়া হয়।
মনি বেগম বলেন, ‘খাদ্যনালিতে সমস্যায় ভুগছি। আমি গরিব মানুষ, চিকিৎসা করাতে পারছি না। চার দিন যাবৎ পেটব্যথায় কষ্ট পাচ্ছিলাম। করোনার কারণে সরকারি হাসপাতালে যেতে পারিনি। গ্রামে ডাক্তার আসবেন শুনে ছুটে এসেছি।’
গত বৃহস্পতিবার থেকে কঠোর লকডাউন শুরু হওয়ায় মনি বেগমের মতো গ্রামের মানুষেরা হাসপাতালে যেতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতিতে আজ থেকে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা ও ভেদরগঞ্জের সখিপুর থানার বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার কাজ শুরু করেছেন একদল চিকিৎসক। স্থানীয় সাংসদ ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমের উদ্যোগে ওই চিকিৎসক দলকে ফোন করলেই তাঁরা গ্রামে ও রোগীর বাড়ি গিয়ে সেবা দিয়ে আসছেন। এর আগেও দুই দফা লকডাউনে ৪৫ দিন ওই চিকিৎসক দল বিভিন্ন গ্রামে মানুষের বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন।
ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা শিবিরের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের ফোন নম্বরগুলো হচ্ছে ০১৭১৮৩৪৫৭৮৮, ০১৯১৭৭৭৭২৬৪ ও ০১৭০৩৯৭৭২৪৪। রোগীরা ওই নম্বরে ফোন করে সমস্যার কথা জানালেই চিকিৎসক দল সেখানে পৌঁছে যাবে।
চিকিৎসক দলটিতে আছেন শরীয়তপুরের বেসরকারি একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক শওকত আলী, একটি বেসরকারি ক্লিনিকের চিকিৎসক শাহানাজ পারভিন ও বেসরকারি একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চূড়ান্ত বর্ষের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান। তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন তিন স্বাস্থ্যকর্মী ও তিন স্বেচ্ছাসেবক। ৯ জনের দলটি আজ নড়িয়ার চামটা ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে ২৫০ ব্যক্তিকে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ দিয়েছে।
একটি মাইক্রোবাসে করে ওই চিকিৎসক দল বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। চিকিৎসাসামগ্রীর পাশাপাশি সঙ্গে থাকছে ওষুধ। রোগী দেখার পর ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী দেওয়া হয় ওষুধ। কোনো রোগীকে ওষুধ না দিতে পারলে ওষুধ কেনার জন্য দেওয়া হয় টাকা। ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা শিবিরের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের ফোন নম্বরগুলো হচ্ছে ০১৭১৮৩৪৫৭৮৮, ০১৯১৭৭৭৭২৬৪ ও ০১৭০৩৯৭৭২৪৪। রোগীরা ওই নম্বরে ফোন করে সমস্যার কথা জানালেই চিকিৎসক দল সেখানে পৌঁছে যাবে।
চিকিৎসক শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম তাঁর নির্বাচনী এলাকার মানুষকে করোনাকালে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। তাঁরা এ উদ্যোগে সম্পৃক্ত হয়েছেন। এখন জ্বর-ঠান্ডা রোগে আক্রান্ত রোগীই বেশি আসছেন। জটিল কোনো রোগী এলে তাঁদের সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। গত বছর করোনা মহামারির প্রথম দিকে (এপ্রিল-মে) ৩০ দিন ও গত মার্চ-এপ্রিলে ১৫ দিন গ্রামে গ্রামে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে।
শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন আবদুল্লাহ আল মুরাদ বলেন, সরকারি হাসপাতালগুলোতে এ মুহূর্তে রোগীর অনেক চাপ বেড়েছে। লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় মানুষও হাসপাতালে আসতে পারছে না। এমন সময় এ সেবা দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে।
পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক বলেন, করোনা মহামারিতে মানুষ অনেক কষ্টে আছেন। সংক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে। তা রোধে নানা ধরনের বিধিনিষেধ চলছে। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসার অভাবে মানুষের জীবন যাতে সংকটে না পড়ে, তার জন্য ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসাসেবা চালু করা হয়েছে। এর বাইরেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কোভিড ও নন–কোভিড রোগীদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অক্সিজেন সরবরাহের যাতে ঘাটতি না হয়, তার জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রদান করা হয়েছে।