
বরিশালের গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ককটেল হামলায় দুজন নিহত হওয়ার ঘটনায় দুটি হত্যা মামলায় হয়েছে। আজ মঙ্গলবার নিহত দুই ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে গৌরনদী থানায় মামলাগুলো করা হয়। পুলিশ এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে একজন নিহত হওয়ার ঘটনায় ওই ওয়ার্ড থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিজয়ী ও পরাজিত সদস্যপদ প্রার্থীকে আসামি করা হয়েছে।
পুলিশ জানান, গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যপদ প্রার্থী ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. গিয়াস মৃধাকে (৪০) সোমবার বিকেলে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। এরপর পরাজিত প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আরজ আলী সরদারের (৫০) সমর্থকেরা সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিজয়ী প্রার্থী গিয়াস মৃধার সমর্থকের ওপর ককটেল হামলা চালান। এতে ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু বকর ফকির (২৭) ঘটনাস্থলেই মারা যান ও আরও ১০ জন আহত হন।
এ ঘটনায় যুবলীগের নেতা আবু বকর ফকিরের বাবা আঞ্জু ফকির বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ২০ জনকে আসামি করে মঙ্গলবার হত্যা মামলা করেছেন। পরাজিত প্রার্থী আরজ আলী সরদারকে ওই মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে। আসামিরা পলাতক।
সোমবার গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউপি নির্বাচনে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ৫ নম্বর কমলাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ইউপি সদস্য প্রার্থী ফিরোজ মৃধার সমর্থক নয়ন মৃধা জালভোট দিতে যান। এ সময় অন্য ইউপি সদস্য প্রার্থী মন্টু হাওলাদারের ছেলে এজেন্ট সাইফুল ইসলাম জালভোট দেওয়ার অভিযোগে নয়নকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেন।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সদস্য প্রার্থী ফিরোজ মৃধা ও মন্টু হাওলাদারের সমর্থকদের মধ্যে সোমবার দুপুরে সংঘর্ষ হয়। এ সময় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটালে ফিরোজ মৃধার চাচাতো ভাই মৌজে আলী মৃধা (৬৪) নিহতসহ ১০ জন আহত হন। ভোটের ফলাফলে ফিরোজ মৃধা জয়ী হন।
মৌজে আলী নিহত হওয়ার ঘটনায় মঙ্গলবার নিহতের ছেলে নজরুল ইসলাম মৃধা (৩২) বাদী হয়ে ২১ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরও ৮০ জনের বিরুদ্ধে গৌরনদী থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় নির্বাচিত সদস্য প্রার্থী ফিরোজ মৃধাকে প্রধান ও পরাজিত প্রার্থী মন্টু হাওলাদারকে ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে।
মৌজে আলী মৃধা হত্যা মামলার বাদী নিহতের ছেলে মো. নজরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার চাচা ফিরোজ মৃধা প্রার্থী ছিলেন এবং তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। চাচার সমর্থক আমার বাবা মৌজে আলী মৃধা প্রতিপক্ষের বোমা হামলায় মারা গেছেন। চাচা ফিরোজ মৃধাকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে মঙ্গলবার জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এটা খুবই অমানবিক ঘটনা।’
আপনার বাবাকে হত্যার ঘটনায় আপনার চাচা ফিরোজ মৃধা কীভাবে প্রধান আসামি হলেন, এ প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মন্টু হাওলাদারকে মামলার এজাহারে ১ নম্বর আসামি করেছি। চাচাকে আমি কোনো আসামি করিনি।’
এ বিষয়ে গৌরনদী মডেল থানার পরিদর্শক মো. তৌহীদুজ্জামান বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ভোটকেন্দ্রে জালভোট দেওয়া নিয়ে বিরোধ ও কেন্দ্রে ককটেল হামলার ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন ফিরোজ মৃধা। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরে তাঁকে মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাদী নজরুল ইসলাম তাঁর চাচাকে ১ নম্বর আসামি দিয়েই মামলা করেছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের কমলাপুর, খাঞ্জাপুর, পশ্চিম খাঞ্জাপুর গিয়ে দেখা গেছে, নির্বাচনী সহিংসতায় দুজন নিহত হওয়ার ঘটনায় গ্রামগুলোতে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গ্রামের অধিকাংশ পুরুষ এলাকাছাড়া।
নির্বাচনী সহিংসতায় দুজন নিহত হওয়ার ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার কথা স্বীকার করে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত সদস্য গিয়াস মৃধা বলেন, ‘গ্রামে আতঙ্ক আছে। কিন্তু আমি বাড়ি বাড়ি গিয়ে সবাইকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছি, যাতে ভয় কেটে যায়।’
গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফজাল হোসেন বলেন, নির্বাচনী সহিংসতায় দুজন নিহত হওয়ার ঘটনায় থানায় দুটি মামলা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।