Thank you for trying Sticky AMP!!

সেতুর এক পাশে সড়ক, অন্য পাশে ধানি জমি

সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার আনুজানি গ্রামের পাশের চেলা খালের ওপর নির্মিত সেতু। সেতুর এক প্রান্তে ধানি জমি।

খালের এক পাশে সড়ক, অন্য পাশে ধানি জমি। জমির মধ্যে আলপথ। মানুষের চলাচল তেমন একটা নেই। তবু খালের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে একটি সেতু। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় তিন কোটি টাকা। এক বছর আগে সেতুর উদ্বোধন হলেও সেতুর এক প্রান্তে কোনো সড়ক না থাকায় সেতুটি কোনো কাজে আসছে না।

সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার ভাতগাঁও ইউনিয়নের আনুজানি গ্রামের পাশের চেলাখালের ওপর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) এই সেতুর অবস্থান। এলাকার বাসিন্দাদের এক পক্ষ বলছে, এখানে সেতুর কোনো প্রয়োজন ছিল না। এদিকে কোনো সড়ক নেই। অন্য পক্ষের দাবি, সড়ক হলে দুটি গ্রামের মানুষের উপকারে আসবে সেতুটি।

সরেজমিন দেখা গেছে, ছাতক উপজেলার জালালপুর থেকে আনুজানি হয়ে একটি সড়ক গেছে আলীগঞ্জ বাজারে। আনুজানি গ্রামের পাশেই চেলা খাল। খালের দক্ষিণে আনুজানি গ্রাম, উত্তরে ধানি জমি ও চেরা বিল। বিলের পাড়ে মইনপুর ও কুরশি গ্রাম। চেলা খালের ওপর এই সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয় তিন বছর আগে। গ্রামের পাশের সড়ক যুক্ত করে সেতুটি খালের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় তিন কোটি টাকা। সেতুর দৈর্ঘ্য ৬৬ মিটার, প্রস্থ সাড়ে ৭ মিটার। কিন্তু সেতুর অপর প্রান্তে কোনো সড়ক নেই। সংযোগ সড়কের পরই জমি। আলপথ ছাড়া সড়কের কোনো অস্তিত্ব নেই সেখানে। এদিকে সেতুটি তুলনামূলক নিচু হওয়ায় ভরা বর্ষায় নৌ চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়।

আনুজানি গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, মইনপুর ও কুরশি ছাড়াও খালের উত্তর পাড়ের আরও কয়েকটি গ্রামের মানুষের যাতায়াতের সুবিধার জন্য এই সেতু নির্মাণে করা হয়েছে। সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আনুজানি গ্রামের বাসিন্দা বিচারপতি মো. ইমান আলী, এলজিইডি ও সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এই অনুষ্ঠানে সেতুর উত্তর পাড়ের মইনপুর ও কুরশি গ্রামে সংযোগের জন্য সড়ক নির্মাণের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

আনুজানি গ্রামের মো. আমজাদ আলী বলেন, ‘ইলা সুন্দর ব্রিজ আমরার এলাকাত আর নাই। অখন রাস্তা দরকার। রাস্তা অইলেই মানুষ চলাচল করত পারব। রাস্তার মাপজোক নেওয়া অইছে। এখন মানুষ হাওর থাকি ব্রিজের ওপর দিয়া বাড়িত ধান আনে।’

ভাতগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য আবদুন নূর বলেন, সেতুর উত্তর পাড় থেকে দুটি গ্রামে যাতায়াতের জন্য সড়ক নির্মাণ করতে হবে। সড়ক না হলে সেতু কোনো কাজে আসবে না।

আনুজানি ও আশপাশের গ্রামের কয়েকজন ব্যক্তি জানান, এলাকার আলীগঞ্জ বাজারের পূর্ব পাশে ওই খালের ওপর একটি সেতু নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। এলাকাবাসী প্রতিবছর বর্ষায় নৌকা এবং শুকনা মৌসুমে সাঁকোর ব্যবস্থা করেন। এ জন্য বছরে ৬০ থেকে ৭০ হাজার ব্যয় হয় তাঁদের। সেখানে সেতু হলে মইনপুর ও কুরশি গ্রামের মানুষও ওই দিকে যাতায়াত করতে পারত। এখন সেতুর সঙ্গে ওই দুই গ্রামের সংযোগ দিতে হলে একদিকে তিন কিলোমিটার, অন্যদিকে চার কিলোমিটার সড়ক করতে হবে। যেদিকে রাস্তা আছে, মানুষের চলাচল বেশি, সেদিকে দাবি থাকা সত্ত্বেও সেতুটি হয়নি।

বড়াটুকা গ্রামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘এলাকার মানুষ চেয়েছিল সেতুটি আলীগঞ্জ বাজারের পাশে খালের ওপর হোক। কিন্তু এলাকার একজন সম্মানীত ব্যক্তির ইচ্ছায় সেতুটি সেখানে না হয়ে আনুজানি গ্রামের পাশে হয়েছে। এটা সবাই জানে। কিন্তু কেউ এ নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি নয়।’

এলজিইডির ছাতক উপজেলা প্রকৌশলী মো. আবুল মনসুর মিয়া বলেন, অনেক স্থানে এ রকম হয়। দেখা গেছে, আগে সেতু হওয়ায় পরে সড়কের কাজ গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত করা হয়েছে। সেতুটির উত্তর পাশে সড়ক করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রকল্প প্রস্তাব প্রস্তুত করছেন তাঁরা।