
সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার গুনাকরকাটি সেতুর ওপর থেকে বেতনা নদীর চরে ফেলে দেওয়া সেই নবজাতকের পরিচয় মিলেছে। ওই নবজাতককে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার মা ও নানি। নবজাতকের মায়ের নাম দীপিকা মণ্ডল (২৫) ও বাবার নাম মৃন্ময় মণ্ডল (৩২)। তাঁরা আশাশুনি উপজেলার বড়দল ইউনিয়নের ফকরাবাদ গ্রামের বাসিন্দা।
নবজাতকের মা দীপিকা মণ্ডল বলেন, গত সোমবার বিকেলে তাকে আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা জনসেবা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সন্ধ্যায় তাঁকে সিজার করা হয়। রাতে জ্ঞান ফিরলে নার্স তাঁকে বলেন, তাঁর কন্যাসন্তান হয়েছে। অসুস্থ হওয়ায় চিকিৎসার জন্য তাকে পাঠানো হয়েছে সাতক্ষীরার শিশু হাসপাতালে। এখন লোকমুখে শুনতে পাচ্ছেন, অসুস্থ হয়ে জন্ম নেওয়ায় তাঁর শিশুকন্যাকে হত্যা করা হয়েছে।
দীপিকার মা অঞ্জু রানী সরদার (৪৮) বলেন, তাঁর মেয়ে একটি অসুস্থ কন্যাশিশু সোমবার সন্ধ্যায় জন্ম দেন। তাঁর স্বামী (দীপিকার বাবা) স্বদীপ সরদারকে দিয়ে জন্মের ঘণ্টাখানেক পর নবজাতক নাতনিকে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় সাতক্ষীরায় শিশু হাসপাতালে। তারপর থেকে তাঁর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। এখন লোকমুখে শুনতে পারছেন, শিশুটিকে গুনাকরকাটি সেতুর নিচে বেতনা নদীর চরে ফেলে দিয়ে আসা হয়েছে। পরে সে মারা গেছে। অঞ্জু রানী অভিযোগ করেন, শিশুকন্যাটি অসুস্থ হয়ে জন্ম নেওয়ায় তাঁর জামাতা মৃন্ময় মণ্ডল, জামাইয়ের মা তন্বী মণ্ডল ও দীপিকার বাবা স্বদীপ মিলে মিলে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। সে অনুযায়ী তাকে গতকাল মঙ্গলবার ভোরে গুনাকরকাটি সেতুর ওপর থেকে বেতনা নদীর চরে ফেলে হত্যা করা হয়।
নবাজাতকটির নানি অঞ্জু রানী অভিযোগ করেন, শিশুকন্যাটি অসুস্থ হয়ে জন্ম নেওয়ায় তাঁর জামাতা মৃন্ময় মণ্ডল, জামাইয়ের মা তন্বী মণ্ডল ও দীপিকার বাবা স্বদীপ মিলে মিলে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
স্থানীয় কুল্যা ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত আল হারুন চৌধুরী জানান, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে কয়েকজন শ্রমিক আশাশুনির গুনকরকাটি সেতুর নিচে বেতনা নদীর চরে কাজ করতে যান। হঠাৎ তাঁরা সাদা একটা কিছু দেখতে পেয়ে কাছে গিয়ে দেখেন, একটি নবজাতক রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এ সময় তাঁদের চিৎকারে সেখানে আশপাশের মানুষ জড়ো হয়। পরে দেখা যায়, শিশুটি বেঁচে রয়েছে। খবর পেয়ে তিনি সেখান থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটি মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে মারা যায়। মঙ্গলবার রাত ১০টায় জানাজা শেষে গুনাকরকাটি মাজার কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
জনসেবা ক্লিনিকের মালিক কমিউনিটি ক্লিনিকের চিকিৎসক কর্মকর্তা সাহিনুর আলম জানান, মায়ের পেটের মধ্যে থেকে শিশুটির অ্যানেনসেফালি ছিল। এটি একধরনের জন্মগত ত্রুটি, যার ফলে নবজাতটির মস্তিষ্ক ও খুলির গঠন সম্পূর্ণ হয়নি। প্রতিবন্ধী অবস্থায় জন্ম নেওয়ায় হয়তো তাকে তার স্বজনেরা হত্যা করে থাকতে পারেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নবজাতকটির বাবা মৃন্ময় মণ্ডল, ঠাকুরমা (দাদি) তন্বী মণ্ডল ও দাদু (মায়ের বাবা) স্বদীপ সরদার গা ঢাকা দিয়েছেন। আজ বিকেল পাঁচটার দিকে বাড়িতে গিয়ে তাঁদের পাওয়া যায়নি।
আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম কবির জানান, তিনি ঘটনাটি শুনেছেন। নবজাতকের স্বজনদের নাম–ঠিকানা সংগ্রহ করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদি কেউ অভিযোগ না করে, তবে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে।