সৌদিপ্রবাসী মা-বাবা দেশে ফেরার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নৌকাডুবিতে মারা যাওয়া মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী আরিফ বিল্লাহর (২০) লাশ দাফন করা হয়েছে। আজ রোববার সকাল ১০টায় বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর নৌকাঘাট-সংলগ্ন স্থানীয় মডেল উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আরিফের জানাজা সম্পন্ন হয়। পরে গ্রামের কবরে তাঁর লাশ দাফন করা হয়।
আরিফ উপজেলার চম্পকনগর গ্রামের সৌদিপ্রবাসী জহিরুল হক ভূঁইয়ার ছেলে। তাঁর মা পারভীন ভূঁইয়াও সৌদি আরবপ্রবাসী। ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে শনিবার রাতে তাঁরা দেশে ফিরে আসেন। আরিফ পরিবারের বড় ছেলে ছিলেন। এ বছর ঢাকা গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়ার। পরিবারের স্বপ্নও ছিল আরিফকে ঘিরে। নৌকাডুবিতে আরিফের মৃত্যু যেন পরিবারের স্বপ্নকেও ডুবিয়ে দিল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মা-বাবা সৌদিপ্রবাসী হওয়ায় একটি ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্সে আরিফের লাশ রাখা হয়। রোববার তাঁর মেডিকেল কলেজের বন্ধুরাও শেষবারের মতো আরিফকে দেখতে আসেন। আরিফের বাবা ও দুই চাচা সৌদি আরবের দাম্মাম নগরে ব্যবসা করেন। যৌথ পরিবার। দুই চাচাও দেশে এসেছেন। দাদা মনিরুল ইসলাম, বড় চাচা ওমর ফারুক (৩৫) ও ছোট চাচা বোরহান উদ্দিন (৩০) বিলাপ করছিলেন আর বলছিলেন, সবার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল।
প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ব্যক্তি জানান, ডুবে যাওয়ার সময় আরিফ নৌকা থেকে লাফ দিয়ে পানিতে পড়ে। আরিফকে জাপটে ধরে অনেকেই বাঁচতে চেয়েছিলেন। শেষে তাঁর জীবনই যায় সবার আগে।
আরিফের বাবা জহিরুল হক ভূইয়া বলেন, ‘ছেলেকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন ও আশা ছিল। ছেলেকে চিকিৎসক বানানোর জন্য শ্রমঘাম মাটি করে সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছিলাম। গত শুক্রবার সৌদি আরবের সময় বিকেল চারটায় দুর্ঘটনার খবর পাই। দুর্ঘটনার খবরটি ফেসবুকেও শেয়ার করি। আমার সঙ্গে আমার স্ত্রীও সৌদি আরবে ছিলেন। তখনো জানতাম না আমাদের আদরের ধন এই নৌকায় ছিল। পরে স্বজনদের মাধ্যমে নৌ দুর্ঘটনায় নিজের সন্তানের মৃত্যুর সংবাদ পাই।’ তিনি বলেন, ১৮ লাখ টাকা খরচ করে ছেলেকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করেছিলেন। কিন্তু এভাবে আশার প্রদীপ নিভে যাবে, মানতেই পারছেন না।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার তিতাস নদের লইছকা বিলে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় নৌকাডুবিতে ২৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাতজনকে আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত বাল্কহেডের মালিক, মাঝি, সহযোগীসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।