Thank you for trying Sticky AMP!!

হাওরে লঞ্চ ডাকাতি: থানা–পুলিশের ঠেলাঠেলিতে ১৩ দিনেও মামলা হয়নি

কিশোরগঞ্জ জেলার মানচিত্র

কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম ও হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার মাঝামাঝি কুশিয়ারা নদীর মোহনায় যাত্রীবাহী এমভি শিবপুর লঞ্চে ডাকাতির ঘটনায় ১৩ দিনেও মামলা হয়নি। এমনকি কোনো অভিযুক্ত শনাক্ত বা গ্রেপ্তার হয়নি। ভরা বর্ষায় হাওরে লঞ্চ ডাকাতির ঘটনায় নৌযান মালিক–শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

তবে নৌ পুলিশের কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পাল্টাপাল্টি নানা যুক্তির পর অবশেষে ডাকাতিস্থল চিহ্নিত করেছে পুলিশ। মূলত লাখাই থানা–পুলিশের জলসীমায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। তবে এখন পর্যন্ত ওই থানায় মামলা হয়নি।

Also Read: জলসীমা নিয়ে চার থানা পুলিশের ঠেলাঠেলি

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ যাত্রী পরিবহন সংস্থার সিলেট অঞ্চলের সহসভাপতি মোশারফ হোসেন বলেন, ঘটনার প্রায় দুই সপ্তাহ হতে চললেও মামলা না হওয়ায় তিনি হতাশ। তিনি আরও বলেন, হাওরে ডাকাতির ঘটনা মানে পুলিশের জলসীমা নিয়ে বিরোধ। জলসীমার দায় নেওয়া নিয়ে পাল্টাপাল্টি যুক্তির খেলায় ভুক্তভোগীরা একসময় মামলা করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এমনটা হলে নৌযান মালিক–শ্রমিক–যাত্রীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, নিরাপদে থাকেন অভিযুক্তরা।

ভৈরব নৌবন্দর সূত্রে জানা যায়, এমভি শিবপুর লঞ্চটি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার মার্কলী লঞ্চঘাট থেকে ভৈরব পর্যন্ত চলাচল করে। প্রায় ৭০ জন যাত্রী নিয়ে ২৬ জুন রাত আটটার দিকে লঞ্চটি মার্কলী থেকে ভৈরবের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। রাত তিনটার দিকে লঞ্চটি কুশিয়ারা নদীর অষ্টগ্রামের কলমা ইউনিয়নের ইকুরদিয়া পয়েন্ট অতিক্রম করছিল। তখন ডাকাতের কবলে পড়ে লঞ্চটি। এর কয়েক ঘণ্টা পর অষ্টগ্রাম থানা–পুলিশ ভুক্তভোগীদের উদ্ধার করে। পরের দিন লঞ্চ কর্তৃপক্ষ মামলা করতে প্রথমে অষ্টগ্রাম থানায় যায়। ‘ডাকাতিস্থলের জলসীমা অষ্টগ্রাম থানাধীন নয়’ যুক্তি দিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা করে থানা–পুলিশ।

এ সময় অষ্টগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোরশেদ জামান তাঁদের জানান, ডাকাতিস্থলের জলসীমা হয় লাখাই থানা, অন্যথায় ভৈরব নৌ পুলিশের অধীনে হতে পারে। কিন্তু লাখাই থানার ওসি সাইদুল ইসলাম বা ভৈরব নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. সাইদুর রহমান দুজনের কেউ ডাকাতির দায় নিতে রাজি নন। ভৈরব নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জের ধারণা, দুর্ঘটনাস্থলের জলসীমা মিঠামইন এলাকায়। তবে দায় নেননি মিঠামইন নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ আনোয়ার হোসেনও। চার থানা–পুলিশের ঠেলাঠেলিতে এখন পর্যন্ত কোনো থানায় মামলাটি নথিভুক্ত হয়নি।

এমভি শিবপুর লঞ্চের তত্ত্বাবধায়ক জয়নাল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, মামলা করতে তাঁরা প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো থানায় যোগাযোগ করছেন। কিন্তু কেউ মামলা নিতে রাজি হচ্ছে না। লাখাই থানায় গিয়েও লাভ হচ্ছে না।

কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নেত্রকোনা ও নরসিংদী জেলা নিয়ে কিশোরগঞ্জ নৌ পুলিশের অঞ্চল। কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) মোফাজ্জল হোসেন জানান, ইতিমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। তাঁদের মনে হয়েছে, জলসীমাটি লাখাই থানাধীন। ওই থানায় মামলা করা হবে।

লাখাই থানার ওসি সাইদুল পুলিশ সুপারের বক্তব্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তবে মামলা না হওয়ার বিষয়ে তাঁর দাবি, লঞ্চমালিককে মামলা করতে বলা হয়েছে, কিন্তু তিনি আসছেন না। ঈদের পর আসবেন বলে জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, লঞ্চ ডাকাতির দায় নিয়ে চার থানা–পুলিশের দায় এড়ানো নিয়ে ২৯ জুন প্রথম আলোতে ‘জলসীমা নিয়ে চার থানা–পুলিশের ঠেলাঠেলি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। গত শুক্রবার এ নিয়ে সম্পাদকীয় ছাপা হয়।