Thank you for trying Sticky AMP!!

'ইজ্জত হারাইয়া ফিরছি টেখাটা ফিরত চাই'

সিলেট

সৌদি আরবে গৃহকর্মীর চাকরির প্রলোভনে ধারদেনা করে তিন লাখ টাকা তুলে দিয়েছিলেন একটি জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিকের হাতে। ভিসা, বিমানের টিকিট নিশ্চিত হওয়ার পর সৌদি আরব যাওয়ার আগের দিন তাঁকে রাখা হয় ঢাকার একটি হোটেলে। সেখানে এক দফা শ্লীলতাহানির শিকার হন। পরদিন যান সৌদি আরব। সেখানে গিয়েও একই অবস্থার মুখ পড়েন তিনি। আর গৃহকর্মীর বদলে পান শ্রমিকের কাজ।

শারীরিকভাবে নির্যাতিত হওয়ার একপর্যায়ে পালিয়ে সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসে আশ্রয় নেন হবিগঞ্জ জেলার ওই নারী। সেখান থেকে ১১ দিনের মাথায় দেশে ফেরেন। ফিরে এসে ওই জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের কাছে টাকা ফেরত চাইতে গিয়ে উল্টো নাজেহাল হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

অসুস্থ স্বামী ও এক মেয়েকে নিয়ে সিলেট নগরে বসবাস করেন ওই নারী। গত সোমবার (১ জুলাই) রাতে প্রথম আলোর সিলেট কার্যালয়ে এসে এমন অভিযোগ করেন তিনি। তিনি দাবি করেন, ‘ইজ্জত হারাইয়া ফিরছি, টেখাটা (টাকা) ফিরত চাই।’ এ ঘটনায় তিনি সিলেট কোতোয়ালি থানায় একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। পাশাপাশি অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস বাংলাদেশের (এটাব) সিলেট কার্যালয়কেও লিখিতভাবে জানিয়েছেন।

থানায় দেওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ওই নারী সিলেট নগরের ‘মুসাফির ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেলস’ নামের এজেন্সির স্বত্বাধিকারী জাহিদ কাওছারের মাধ্যমে সৌদি আরব গিয়েছিলেন। তিন লাখ টাকা দেওয়ার পর গত ১৭ এপ্রিল কাওছার তাঁকে ঢাকায় নিয়ে যান। ওই দিন তিনি ঢাকার একটি আবাসিক হোটেলে রাত যাপনের সময় কাওছারের মাধ্যমে শ্লীলতাহানির শিকার হন। পরদিন সৌদি আরব যান। সেখানে গিয়ে একাধিকবার এ পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন। দূতাবাসের মাধ্যমে দেশে ফেরেন ৩০ এপ্রিল। দেশে ফেরার পর কাওছার পুরো তিন লাখ টাকা দিতে সম্মত হন। এখন সময়ক্ষেপণ করছেন।

গত ১৪ জুন লিখিত অভিযোগটি দাখিল করার পর সিলেট কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বাবুল মিয়া এই ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব পান। গত মঙ্গলবার বাবুল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ওই নারীর অভিযোগের ব্যাপারে দুই পক্ষকে নিয়ে আলোচনা করেছেন। দুই পক্ষকেই বিষয়টি মীমাংসা করে নেওয়ার জন্যও বলেছেন। তবে তাঁরা আপস করতে রাজি নন। তিনি জানান, টাকা লেনদেনের বিষয়ে ওই নারী কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। অন্যদিকে ট্রাভেল এজেন্সির মালিক সব অভিযোগ অস্বীকার করছেন। শ্লীলতাহানির অভিযোগ প্রসঙ্গে এসআই বলেন, এ বিষয়ে শারীরিক পরীক্ষা করানোর আগে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না।

এই বিষয়ে মুসাফির ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেলসের মালিক জাহিদ কাওছার বলেন, ‘ওই নারী কয়েকজন লোক মারফত আমার ট্রাভেল এজেন্সিতে আসেন। এ সময় তাঁরা মেডিকেল প্রতিবেদনসহ সব কাগজপত্র নিয়ে এসেছিলেন। আমি শুধু সৌদি আরবের ভিসা এনে দিয়েছি। এ জন্য কোনো টাকাপয়সা নিইনি।’ শ্লীলতাহানির অভিযোগ প্রসঙ্গে কাওছার বলেন, ‘এটিও মিথ্যা। আমি ওই নারীর সঙ্গে ঢাকায় যাইনি। একই হোটেলে থাকার তো প্রশ্নই ওঠে না। ওই নারীকে কিছু মানুষ প্রলোভন দেখাচ্ছেন। তাঁরা আমার কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা আদায় করার সুযোগ রয়েছে বলে যুক্তি দিয়ে এসব মিথ্যা অভিযোগ করাচ্ছেন।’

এ বক্তব্য প্রসঙ্গে ওই নারী বলেন, ‘উনি তো এখন আমারে চিনেনও না। আমার মেয়ের কঠিন অসুখ। মানুষ চিকিৎসার সহায়তায় টেখা (টাকা) তুলে দিছিল। হেই টেখাসহ সুদে আরও টেখা আনছিলাম। এই সব মিলাইয়া তিন লাখ টাকা দিছি।’

সিলেটে ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে হয়রানির শিকার হওয়া ব্যক্তিদের স্বার্থে এটাব একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলেছিল হয়রানির শিকার হওয়া ব্যক্তিদের সরাসরি সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করতে। এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার এটাব সিলেট কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, সভাপতি আবদুল জব্বার জলিলের নেতৃত্বে একটি দল এসব অভিযোগ দেখছে। সভাপতি হজে গেছেন। হজ থেকে ফিরলে বিষয়টি দেখা হবে।