মনিরামপুরে গৃহবধূর ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার, পলাতক স্বামীর বাড়ি ভাঙচুর স্থানীয়দের

গৃহবধূর লাশ উদ্ধারের পর যশোরের মনিরামপুর উপজেলার খাটুয়াডাঙ্গা গ্রামের মুন্সির মোড় এলাকা আব্দুর রশীদের চাতালঘর ভাঙচুর করে বিক্ষুদ্ধ লোকজন। সোমবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

যশোরের মনিরামপুর উপজেলা থেকে এক গৃহবধূর ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে উপজেলার খাটুয়াডাঙ্গা গ্রামের একটি চাতালের ঘর থেকে পুলিশ তাঁর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে। ওই গৃহবধূর নাম সাথী আক্তার ওরফে স্বরূপজান (৩৫)। তিনি উপজেলার খাটুয়াডাঙ্গা গ্রামের আবদুর রশিদ ওরফে মিন্টুর (৫০) স্ত্রী। তিনি চাতালে শ্রমিকের কাজ করতেন।

ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী আবদুর রশিদের চাতাল ও চালকল ভাঙচুর করেছেন। এ সময় তাঁর চাতাল ও চালকলসংলগ্ন বাড়ির আসবাবপত্র লুট করা হয়।

স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ জানায়, মনিরামপুর উপজেলার খাটুয়াডাঙ্গা গ্রামের মুন্সির মোড় এলাকায় আকদুর রশিদের একটি ধানের চাতাল ও একটি চালকল আছে। সাথী আক্তার আবদুর রশিদের দ্বিতীয় স্ত্রী। কয়েক বছর আগে আবদুর রশিদ সাথী আক্তারকে বিয়ে করেন। পরে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। দেড় বছর আগে তাঁরা পুনরায় বিবাহ করেন। সাথী আক্তার চাতালের একটি ঘরে থাকতেন। তিনি চাতালেই কাজ করতেন। আজ সোমবার সকালে কয়েকজন শ্রমিক চাতালে কাজ করতে এসে ঘরে সাথীর রক্তাক্ত লাশ দেখতে পান। পরে তাঁরা বিষয়টি এলাকাবাসীদের জানান। এরপর এলাকাবাসীরা পুলিশে খবর দেন। মনিরামপুর থানা এবং নেহালপুর পুলিশ ফাঁড়ি থেকে পুলিশ এসে দুপুর ১২টার দিকে লাশটি উদ্ধার করে।

এরপর বেলা একটার দিকে বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী আবদুর রশিদের চাতাল ও চালকল ভাঙচুর করে। এ সময় কিছু লোকজন তাঁর চাতাল ও চালকলসংলগ্ন বাড়ি আসবাবপত্র লুট করে নিয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাতে জানা যায়, আবদুর রশিদ একসময় অস্ত্র কেনাবেচার কাজ করতেন। একপর্যায়ে তিনি অস্ত্রসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। এরপর প্রায় ১০ বছর সাজা খেটে কারাগার থেকে বেরিয়ে এসে সাথীকে বিয়ে করেন।

পুলিশ জানায়, বোরবার রাতে সাথী আক্তারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর গলা, মাথা ও কপালে ধারালো অস্ত্রের অনেকগুলো কোপের চিহ্ন রয়েছে। পুলিশের ধারণা, আবদুর রশিদ তাঁর স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। ঘটনার পর থেকে আবদুর রশিদ, তাঁর বড় স্ত্রী ও ছেলে এবং পূত্রবধু পলাতক রয়েছেন।

মনিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ গাজী বলেন, সাথী আক্তারের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর গলা, মাথা ও কপালে ধারালো অস্ত্রের অনেকগুলো কোপের চিহ্ন রয়েছে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাথী আক্তারের মা আলেয়া বেগম বলেন, ‘সাথী আমার একমাত্র মেয়ে। চার মাস আগে ওর বাপের জমি বেচে আবদুর রশিদ মিন্টুকে চার লাখ টাকা দিয়েছি। আরও এক লাখ টাকা মিন্টু চেয়েছে। টাকা না দেওয়ায় মিন্টু আমার মেয়েকে খুন করেছে। আমি মিন্টুর ফাঁসি চাই।’

সাথীর এর আগেও বিয়ে হয়েছিল জানিয়ে আলেয়া বেগম আরও বলেন, ‘সাথীর প্রথম স্বামীর ঘরে দুই ছেলে আছে। সেখানে অমিল হওয়ায় ছেলে দুটোকে নিয়ে মেয়ে আমার বাড়ি থাকত। চার বছর আগে মিন্টু (আবদুর রশিদ) আমার বাড়ি গিয়ে সাথীকে চাতালে কাজের জন্য নিয়ে আসে। এরপর একদিন মিন্টু আমার মেয়েকে চাতালে ফেলে ধর্ষণ করে। আমি জানতে পেরে প্রতিবাদ করলে মিন্টু সাথীকে কাজী অফিসে নিয়ে বিয়ে করে। প্রায়ই মিন্টু সাথীকে মারধর করতো।’