কাজী সালিমুল হক
কাজী সালিমুল হক

নির্বাচনে লড়বেন না বিএনপির সালিমুল হক, রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা

আর কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার পাশাপাশি সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি ও মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক (কাজী কামাল)। আজ শনিবার ভোরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজ আইডিতে একটি পোস্টে এ ঘোষণা দেন তিনি।

এর আগে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাগুরার দুটি আসন (মাগুরা-১ ও মাগুরা-২) থেকে সালিমুল হকের পক্ষে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন স্থানীয় বিএনপির একাংশের নেতা-কর্মীরা।

শালিখা উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আনিসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে সালিমুল হক নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা উপজেলা পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের নিয়ে আগামীকাল বৈঠক আহ্বান করেছি। সেখানে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে দীর্ঘদিন নানা ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করেই আমরা বিএনপি করি। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে আমরা কেউ নই।’

সালিমুল হক ফেসবুকে লেখেন, ‘দীর্ঘ সাত বছর কারাবাসে আমার পরিবার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিবারের একান্ত অনুরোধে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আর কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব না এবং সক্রিয় রাজনীতি থেকে চিরতরে অবসর গ্রহণ করছি। জীবনের বাকি সময়টুকু পরিবার নিয়ে শান্তিতে কাটাতে চাই।’

বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সূত্রে জানা গেছে, মাগুরা জেলা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সাবেক সভাপতি কাজী সালিমুল হক ১৯৯৪ সালে বহুল আলোচিত মাগুরা-২ আসনের উপনির্বাচনে দলের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন। ওই উপনির্বাচনে ভোট ডাকাতি ও কারচুপির অভিযোগ তুলে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। পরে বিএনপি সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে সংসদে বিল পাস করে। এরপর ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনেও মাগুরা-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ২০০৮ সালের পর তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে সরে যান।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে কাজী সালিমুল হকও আসামি ছিলেন। এ মামলায় ২০১৭ সাল থেকে তিনি কারাগারে ছিলেন। ২০২৪ সালের আগস্টে কারামুক্ত হন।

দীর্ঘ বিরতির পর গত ডিসেম্বরে মাগুরার রাজনীতির মঞ্চে ফেরেন কাজী সালিমুল হক। এরপর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্যসচিব রবিউল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে মাগুরা-২ আসনের নির্বাচনী এলাকায় একাধিক বড় সমাবেশ করেন তিনি। তাঁরা দুজনই এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত ধানের শীষের মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী। এর আগে ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তাঁকে এ আসনে মনোনয়ন দেয় দলটি।

বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে মাগুরার বিএনপি দুটি ধারায় বিভক্ত। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে মাগুরা-২ আসনে একটি অংশের নেতৃত্বে ছিলেন নিতাই রায় চৌধুরী। অপর অংশের নেতৃত্বে ছিলেন কাজী সালিমুল হক ও যুবদল নেতা রবিউল ইসলাম। আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে নিতাই রায় চৌধুরীকে প্রার্থী ঘোষণা করার পর এর বিরোধিতা করে বিএনপির একটি অংশ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। গত ১৮ নভেম্বর শালিখায় ওই অংশের নেতা-কর্মীদের নিয়ে সমাবেশে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন কাজী সালিমুল হক।

নির্বাচনে না থাকা এবং রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণার বিষয়ে কথা বলতে কাজী সালিমুল হকের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তাঁর অনুসারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁদের দাবির মুখেই কাজী সালিমুল হক স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে সম্মত হয়েছিলেন। এ বিষয়ে তাঁরা কেন্দ্রে আবেদনও করেছিলেন। তবে দলীয় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তিনি পিছু হটেন এবং ক্ষোভ থেকে রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা দেন।