নরসিংদী সদরের চিনিশপুর ইউনিয়নের গাবতলী এলাকার এই বাড়িতে ভূমিকম্পের সময় ছাদ ধসে দুই শিশুসহ তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন
নরসিংদী সদরের চিনিশপুর ইউনিয়নের গাবতলী এলাকার এই বাড়িতে ভূমিকম্পের সময় ছাদ ধসে দুই শিশুসহ তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন

ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদীতে আতঙ্ক-হুড়োহুড়ি, হাসপাতালে ৬২ জন

নরসিংদীতে ভূমিকম্পের সময় একটি একতলা ভবনের ছাদ ধসে দুই শিশুসহ তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার সকালে সদরের চিনিশপুর ইউনিয়নের গাবতলী এলাকার একটি মহিলা মাদ্রাসাসংলগ্ন বাড়িতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া আরও ৫৯ জন ব্যক্তি সামান্য আহত হয়ে, অজ্ঞান হয়ে ও প্যানিক অ্যাটাকের কারণে নরসিংদী সদর হাসপাতাল ও জেলা হাসপাতালে এসেছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

গুরুতর আহত তিনজন হলেন ওই বাড়ির বাসিন্দা মো. দেলোয়ার (৩৭), তাঁর দুই সন্তান তাসফিয়া (১৭) ও মো. ওমর (৯)। নরসিংদী সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তিনজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, ভূমিকম্পের সময় পার্শ্ববর্তী একটি বহুতল ভবনের ছাদ থেকে নির্মাণসামগ্রী ছিটকে পড়ে একতলা ভবনটিতে। এতে ভবনটির ছাদের কিছু অংশ ধসে পড়ে। এ সময় দেলোয়ার, তাসফিয়া ও ওমর ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছিলেন। ছিটকে পড়া নির্মাণসামগ্রী ও ধসে পড়া ছাদের টুকরা মাথায় পড়ে গুরুতর আহত হন তাঁরা।

স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় দ্রুত তিনজনকে উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার জন্য বলেন। পরে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন আহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা।

নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ফরিদা গুলশানারা কবির জানান, আহত তিনজনের মধ্যে বাবা-ছেলের অবস্থা আশঙ্কাজনক। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৪৬ জন রোগী এসেছেন, যাঁরা ভূমিকম্পের সময় দৌড়ে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার সময় বিভিন্নভাবে আঘাত পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ অজ্ঞান হয়েছেন, কেউ প্যানিক অ্যাটাকের কারণে এসেছেন।

নরসিংদী পলাশ উপজেলার দড়িহাওলাপাড়া এলাকার বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন পলাশ রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজের সামনে

১০০ শয্যাবিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এ এন এম মিজানুর রহমান জানান, ‘ভূমিকম্পের সময় ছোটাছুটি করতে গিয়ে বিভিন্নভাবে আহত ১৩ জনকে আমরা জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দিয়েছি। তাঁদের কারও অবস্থাই আশঙ্কাজনক নয়।’

আজ শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটের দিকে এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এ সময় কেঁপে ওঠে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল নরসিংদীর মাধবদী। বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পের মাত্রা ৫ দশমিক ৭। তবে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) বলছে, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির তীব্রতা ছিল ৫ দশমিক ৫।

ভূমিকম্পের সময় হঠাৎ ভূপৃষ্ঠ কাঁপতে শুরু করলে দুলে ওঠে বহুতল ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা। কয়েক সেকেন্ডের এই কম্পনে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হঠাৎ ঝাঁকুনি টের পেয়ে ঘরবাড়ি থেকে দ্রুত খোলা জায়গা বা সড়কে বের হয়ে আসেন লোকজন।

ভূমিকম্পের পর নরসিংদী সদরের একটি দোকানের চিত্র

নরসিংদীর অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ভূমিকম্পের সময় তাঁদের পরিস্থিতি বর্ণনা করেছেন। অনেকে বাসার দেয়াল অথবা ফ্লোর ফেটে যাওয়ার ছবি ফেসবুকে দিয়েছেন। ঘরে আসবাব ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে—এমন ছবিও অনেকে দিয়েছেন।

পলাশের ঘোড়াশাল পৌরসভার ঈদগাহ রোডের মারকাসুল সুন্নাহ তাহফিজুল কুরআন মাদ্রাসার পরিচালক সালাউদ্দিন আনসারী বলেন, ‘আমাদের মাদ্রাসার ছয়তলা ভবনের চার থেকে পাঁচটি জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা সবাই আতঙ্কিত।’

নরসিংদী শহরের মধ্যকান্দাপাড়া এলাকার বাসিন্দা পূনম সাহা বলেন, ‘এভাবে ভবন দুলতে আগে কখনো দেখিনি। পরিবারের সবাইকে নিয়ে দৌড়ে নিচে নেমেছি।’