ব্রাহ্মণবাড়িয়া আখাউড়া উপজেলার কালিকাপুর সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। আজ সকাল ১০টার দিকে
ব্রাহ্মণবাড়িয়া আখাউড়া উপজেলার কালিকাপুর সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। আজ সকাল ১০টার দিকে

আখাউড়ায় পাহাড়ি ঢলে ১৯ গ্রাম ও স্থলবন্দর প্লাবিত, পানিবন্দী ৪৫০ পরিবার

ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আখাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী ১৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ৪৫০ পরিবারের অন্তত দেড় হাজার মানুষ। রপ্তানিকারকদের কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি জমলেও স্থলবন্দরের ব্যবসা কার্যক্রমসহ যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক আছে।

গত শনিবার রাত থেকে উপজেলায় পাহাড়ি ঢল নামতে শুরু করে। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির কারণে আখাউড়ার বিভিন্ন নদ-নদী, খাল-বিলে পানি বেড়ে চলেছে। আখাউড়া স্থলবন্দরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা কালন্দি খাল, কালিকাপুর হয়ে আবদুল্লাপুর দিয়ে জাজি গাঙ, বাউতলা দিয়ে মরা গাঙ ও মোগড়া ইউনিয়ন দিয়ে বয়ে চলা হাওড়া নদী দিয়ে গত শনিবার রাতে অস্বাভাবিকভাবে ঢলের পানি ঢুকতে শুরু করে। এতে আখাউড়া উপজেলার দক্ষিণ, মোগড়া ও মনিয়ন্দ ইউনিয়নের গ্রামের ফসলি জমি, রাস্তাঘাট ও কিছু বাড়িঘর তলিয়ে যায়।

আগরতলা-আখাউড়া আন্তর্জাতিক সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। আজ সকাল সাড়ে নয়টার দিকে

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে ৪৫০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী পরিবারের জন্য ১৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার আবদুল্লাহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে ১৩টি পরিবারের ৫০ জন গতকাল রোববার আশ্রয় নিয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত শনিবার রাত থেকে গতকাল রাত তিনটা পর্যন্ত উপজেলার কালন্দি খাল, জাজি গাঙ ও হাওড়া নদী দিয়ে পানি ঢুকছে। আজ সোমবার সকাল নয়টা পর্যন্ত পানি সামান্য কমেছে। তবে ৯টার পর বৃষ্টি শুরু হলে পানি আবার বাড়তে শুরু করে। এতে দক্ষিণ ইউনিয়নের কালিকাপুর বীরচন্দ্রপুর, আবদুল্লাহপুর, কেন্দুয়া, বঙ্গেরচর; মোগড়া ইউনিয়নের বাউতলা, উমেদপুর, সেনারবাদী, জয়নগর, কলাপাড়া, রাজেন্দ্রপুর, আওড়ার চর, ছয়গরিয়া; মনিয়ন্দা ইউনিয়নের ইটনা, আইড়ল, টনকি, তুলাইশিমুল, শোনলহগর, নতুনপাড়া গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের কিছু রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। এতে লোকজনের দুর্ভোগ বেড়েছে।

আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন পুলিশ চেকপোস্টের সামনের অংশে পানি ঢুকেছে। আজ দুপুর সোয়া ১২টার দিকে

আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন পুলিশ চেকপোস্টের পরিদর্শক মোহাম্মদ আবদুস সাত্তার বলেন, আজ পৌনে ১১টা পর্যন্ত ৪০-৫০ জন যাত্রী পারাপার করেছেন। সকালের পর থেকে ইমিগ্রেশন ভবনের সামনের অংশে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।

পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মনজুর রহমান বলেন, আখাউড়া উপজেলার হাওড়া নদীর ভারত সীমান্তে আজ সকাল ৯টায় পানির সমতল ছিল ১১ দশমিক ২২ মিটার। স্থানটির বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৭০ মিটার। অর্থাৎ বিপৎসীমার ৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। গতকাল একই সময়ে পানির সমতল ছিল ১১ দশমিক ৫৮ মিটার। অর্থাৎ গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৬ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়েছে।

আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জি এম রাশেদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, হাওড়া নদীর বাঁধ অক্ষত আছে। ১৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে ৪৫০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যেই একটি আশ্রয়কেন্দ্রে কয়েকটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।