সেন্ট মার্টিন দ্বীপের পশ্চিম সৈকতে জোয়ারের পানিতে ভেসে আসে অলিভ রিডলে প্রজাতির মৃত কাছিমটি। ২০ ডিসেম্বর সকালে তোলা
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের পশ্চিম সৈকতে জোয়ারের পানিতে ভেসে আসে অলিভ রিডলে প্রজাতির মৃত কাছিমটি। ২০ ডিসেম্বর সকালে তোলা

সেন্ট মার্টিনে ডিম পাড়ার মৌসুমে ভেসে আসছে কাছিমের মৃতদেহ

ডিম পাড়ার মৌসুমে কক্সবাজারের টেকনাফের সেন্ট মার্টিন দ্বীপে একের পর এক ভেসে আসছে সামুদ্রিক মা কাছিমের (অলিভ রিডলে) মৃতদেহ। চলতি ডিসেম্বরের প্রথম ২২ দিনে দ্বীপের বিভিন্ন সৈকতে ভেসে আসে অন্তত ১৪টি মৃত কাছিম।

পরিবেশ অধিদপ্তর, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পরিবেশকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নভেম্বর থেকেই ডিম পাড়ার জন্য গভীর সমুদ্র থেকে মা কাছিম উপকূলে আসতে শুরু করে। তবে এ যাত্রায় মাছ ধরার জালে আটকা পড়ে মৃত্যু হচ্ছে কাছিমের। কিছু কাছিম জাল এড়িয়ে সৈকতে পৌঁছালেও বেওয়ারিশ কুকুরের আক্রমণের মুখে পড়তে হয়। সম্প্রতি ভেসে আসা ১৪টি মৃত কাছিমের ৯টিই খেয়ে ফেলেছে কুকুর। বাকিগুলো উদ্ধার করে পরিবেশকর্মীরা মাটিতে পুঁতে দিয়েছেন। এসব কাছিমের শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল।

নভেম্বর থেকে কক্সবাজার, ইনানী, টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ও সোনাদিয়ায় মা কাছিমের ডিম পাড়া শুরু হয়, চলে মার্চ পর্যন্ত। কিন্তু এসব এলাকায় মাছ ধরার নিষিদ্ধ জাল রয়েছে, যার সংখ্যা ৪৫ হাজারের বেশি। এসব জালে আটকা পড়েই বেশির ভাগ কাছিমের মৃত্যু হচ্ছে।
দীপক শর্মা, সভাপতি, কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদ

কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা প্রথম আলোকে বলেন, নভেম্বর থেকে কক্সবাজার, ইনানী, টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ও সোনাদিয়ায় মা কাছিমের ডিম পাড়া শুরু হয়, চলে মার্চ পর্যন্ত। কিন্তু এসব এলাকায় মাছ ধরার নিষিদ্ধ জাল রয়েছে, যার সংখ্যা ৪৫ হাজারের বেশি। এসব জালে আটকা পড়েই বেশির ভাগ কাছিমের মৃত্যু হচ্ছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক খন্দকার মাহমুদ পাশা প্রথম আলোকে বলেন, ডিম পাড়ার জন্য মা কাছিম বালুচরে উঠলেই দলবদ্ধভাবে কুকুর আক্রমণ করছে। দ্বীপে কুকুরের সংখ্যা প্রায় ছয় হাজার। প্রজনন ঠেকাতে কুকুর বন্ধ্যত্বকরণ কর্মসূচি চলছে। পাশাপাশি গত দুই দিনে তিনটি জীবিত কাছিমের ডিম বালুচর থেকে সংগ্রহ করে পরিবেশ অধিদপ্তরের হ্যাচারিতে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

সৈকতের স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি ১১ ও ১৪ ডিসেম্বর বিকেলে দ্বীপের উত্তর সৈকতে এবং ৬ ডিসেম্বর দুপুরে ছেঁড়াদিয়া সৈকতে ভেসে আসা তিনটি কাছিমের শরীরে আঘাতের চিহ্ন ও পেটে ডিম পাওয়া গেছে। স্বেচ্ছাসেবীদের দাবি, জালে আটকা পড়া অনেক কাছিমের মৃত্যু হয় জেলেদের লাঠির আঘাতে। পরে সেগুলো সাগরে ফেলে দেওয়া হয়। এগুলোই জোয়ারে সৈকতে ভেসে আসে। তখন অভুক্ত বেওয়ারিশ কুকুর সেগুলো খেয়ে থাকে। আবার বালুচরে ডিম পেড়ে গভীর সাগরে ফিরে যাওয়ার সময়ও অনেক মা কাছিম জালে আটকা পড়ছে।

জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের স্বেচ্ছাসেবী আবদুল আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ৩টি মা কাছিমের পাড়া ২৮৬টি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব ডিম পরিবেশ অধিদপ্তরের হ্যাচারিতে বালুর নিচে সংরক্ষণ করা হয়েছে। তিন মাসের মধ্যে ডিমগুলো থেকে কাছিমের ছানা জন্ম নেবে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর সেন্ট মার্টিন সৈকত থেকে ২৩টি কাছিমের ২ হাজার ৮২৪টি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ২ হাজার ১৬৫টি ছানা জন্ম নেয়। পরে এসব ছানা সাগরে অবমুক্ত করা হয়।