ফরিদপুরে সীমানা পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে আবারও দুই মহাসড়ক অবরোধ করেছেন এলাকাবাসী। আজ বুধবার সকালে ভাঙ্গা উপজেলার পুখুরিয়া এলাকায়
ফরিদপুরে সীমানা পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে আবারও দুই মহাসড়ক অবরোধ করেছেন এলাকাবাসী। আজ বুধবার সকালে ভাঙ্গা উপজেলার পুখুরিয়া এলাকায়

টানা দ্বিতীয় দিনের মতো ফরিদপুরে দুই মহাসড়কে অবরোধ

ফরিদপুর-৪ সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় টানা দ্বিতীয় দিনের মতো ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেছেন এলাকাবাসী। এতে মহাসড়ক দুটিতে সৃষ্ট যানজটে ভোগান্তিতে পড়েছেন চলাচলকারী যাত্রী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

আজ বুধবার সকাল সাতটা থেকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের হামিরদী ইউনিয়নের পুকুরিয়া, হামিরদী, মাধবপুর ও নওয়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড এবং ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের হামিরদী ইউনিয়নের মুনসুরাবাদ বাসস্ট্যান্ড ও আলগী ইউনিয়নের সুয়াদী এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। এতে ওই দুই মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক, পিকআপ, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহন আটকে যায়।

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা মহাসড়ক থেকে অবরোধ কর্মসূচি তুলে নেওয়ার সময় আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দেন, আজ মহাসড়কের পাশাপাশি রেলপথ অবরোধ করা হবে। তবে রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, সকাল থেকেই ভাঙ্গা হয়ে বিভিন্ন রেল চলাচল স্বাভাবিক আছে।

সকাল থেকে আন্দোলনকারীরা ‘রক্ত লাগলে রক্ত নে, আমার ভাঙ্গা ফিরায় দে’; ‘মরলে মরব রাস্তায়, যাব না রে সালথায়’; ‘তোমার আমার ঠিকানা নগরকান্দায় হবে না’; ‘রক্ত ঝরবে বুকের মাঝে, ভাঙ্গা যাবে না সালথার কাছে’; ‘মরলে মরব পথে পথে, ভাঙ্গা দেব না অন্য হাতে’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পুখুরিয়ায় এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ কর্মসূচি

সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পুখুরিয়ায় এলাকায় চৌকি পেতে ও টায়ার জ্বালিয়ে এ কর্মসূচি শুরু করা হয়। ভাঙ্গার মুনসুরাবাদে মহাসড়কে গাছের ডাল ফেলে সড়ক অবরোধ করা হয়।

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের একাধিক স্থানে অবরোধের কারণে ফরিদপুর, ঢাকা ও বরিশালগামী সব পথে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া একই মহাসড়কের সুয়াদী ও মুনসুরাবাদে অবরোধের কারণে গোপালগঞ্জ-বাগেরহাট-খুলনা এলাকার সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তবে ভাঙ্গার দক্ষিণ পাড়ে অবরোধ কর্মসূচি শুরু না হওয়ায় বরিশাল-পটুয়াখালী থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকাগামী বাস চলাচল এখন স্বাভাবিক আছে।

নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রোকিবুজ্জামান বলেন, ‘আমরা অনেকটা অসহায়। এলাকাবাসীর যে দাবি, তা পূরণ না হলে তাঁরা রাস্তা ছাড়বেন না বলে জানিয়েছেন। এখন এত মানুষকে আমরা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করব?’

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্লা জানান, আন্দোলনকারীদের যে দাবি তা জাতীয় পর্যায়ের বিষয়। এখানে স্থানীয় প্রশাসনের করার কিছুই নেই। এটির সমাধান স্থানীয়ভাবে অসম্ভব।

তবে এ ব্যাপারে ৭ সেপ্টেম্বর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশন প্রকাশিত সংসদীয় আসনের সীমানার চূড়ান্ত তালিকা নিয়ে আইন অনুযায়ী কোনো আদালত বা কর্তৃপক্ষের কাছে ‘প্রশ্ন তোলার’ কোনো সুযোগ নেই বলে জানান নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। তিনি বলেন, বিক্ষোভ-আন্দোলন করেও কোনো লাভ হবে না।

গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের গেজেটে ফরিদপুরের দুটি সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তন করা হয়। এর মধ্যে ফরিদপুর-৪ আসনের (ভাঙ্গা-সদরপুর-চরভদ্রাসন) ভাঙ্গা থেকে আলগী ও হামিরদী ইউনিয়ন বাদ দিয়ে ফরিদপুর-২ আসনের (নগরকান্দা-সালথা) সঙ্গে যুক্ত করা হয়। এ সিদ্ধান্তের পরপরই ভাঙ্গা উপজেলা বিএনপি ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করে। গত শুক্রবার এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধে ঢাকা-বরিশাল ও ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক দীর্ঘ সময় অবরোধ করা হয়।