
বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের পেশাজীবী সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) কুমিল্লা জেলার সভাপতি মোহাম্মদ মাসুম হাসানের বিরুদ্ধে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কেনাকাটায় অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছিলেন সংগঠনটির মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আরিফ হায়দার। ওই অভিযোগকে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক উল্লেখ করে আরিফ হায়দারের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন মাসুম হাসানের অনুসারীরা।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগরের কান্দিরপাড় এলাকার পূবালী চত্বরে ‘কুমিল্লার সচেতন নাগরিক’ ব্যানারে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়। কর্মসূচিতে কোনো চিকিৎসককে অংশ নিতে দেখা যায়নি। তবে উপস্থিত সবাই চিকিৎসক নেতা মোহাম্মদ মাসুদ হাসানের (এম এম হাসান) অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
মানববন্ধনে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার কালীরবাজার এলাকার বাসিন্দা মো. আরিফ হোসেন বলেন, এম এম হাসানের বিরুদ্ধে যেসব দুর্নীতির অভিযোগ করা হয়েছে, তা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছুই নয়। আরিফ হায়দার মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচার করছেন। আরিফ হায়দার নিজেই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। তাঁরা তাঁর বিচার চান।
আবদুল লতিফ নামের একজন বলেন, ‘ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব থেকেই আরিফ হায়দার এ ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছেন। আমরা তারেক রহমান ও ড্যাবের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে দাবি জানাচ্ছি, বিএনপির নাম ভাঙিয়ে যারা ড্যাবের মতো মর্যাদাশীল সংগঠনের সুনাম নষ্ট করছে, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের কেনাকাটায় বড় ধরনের অনিয়ম নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। অভিযোগ ওঠে, ২৪ কোটি টাকার কেনাকাটায় চার কোটি টাকার বেশি লুটপাট হয়েছে। এতে জড়িত ছিলেন হাসপাতালের পরিচালক মো. মাসুদ পারভেজ ও ড্যাব নেতা এম এম হাসান। এ নিয়ে গত ২১ সেপ্টেম্বর ড্যাবের কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ শাখা ও জাতীয়তাবাদী চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উদ্যোগে একটি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় কলেজ শাখা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও ড্যাবের মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আরিফ হায়দার এম এম হাসানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ করেন। একই সভায় এম এম হাসান তাঁর বিরুদ্ধে করা অভিযোগ অস্বীকার করে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন। এমন পরিস্থিতিতে গত ২২ সেপ্টেম্বর রাতে ড্যাবের কেন্দ্রীয় মহাসচিব মো. জহিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ড্যাবের কুমিল্লা জেলা, মহানগর ও মেডিকেল কলেজ শাখা কমিটির সব কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। পাশাপাশি তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়।
আজকের মানববন্ধনের পর আরিফ হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ওই সভায় দীর্ঘ বক্তব্যে তাঁর (এম এম হাসান) অনিয়ম ও দুর্নীতির সব তথ্য ফাঁস করে দিয়েছি। ২৪ কোটি টাকার কেনাকাটায় এম এম হাসান ২ কোটি ২০ লাখ টাকা ঠিকাদারের কাছ থেকে নিয়েছেন, পরিচালক নিয়েছেন ২ কোটির বেশি। তিনি আর পরিচালক মিলে কেনাকাটায় লুটপাট করেছেন।’
অভিযোগের বিষয়ে এম এম হাসান প্রথম আলোকে বলেন, আরিফ হায়দারের একটি কথারও সত্যতা নেই। এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। মূল বিষয়টি হচ্ছে আরিফ হায়দার আশঙ্কা করছেন, বিগত সময়ে নিজের কর্মকাণ্ডের কারণে তিনি ভবিষ্যতে ড্যাব থেকে বাদ পড়তে পারেন। এ জন্য তিনি এসব মিথ্যাচার শুরু করেছেন। ড্যাবের সাংগঠনিক দ্বন্দ্ব থেকে তিনি মিথ্যাচার করেছেন।