
টানা বৃষ্টিতে কাপ্তাই হ্রদের পানি অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। এতে চট্টগ্রাম পার্বত্য এলাকার বিভিন্ন অঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার পাঁচটি পাড়ায় পানিবন্দী রয়েছে অন্তত ২০০ পরিবার। অন্যদিকে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় বান্দরবান-রাঙামাটি সড়কে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হ্রদের পানি বাড়ায় খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার সিলেটিপাড়া, চট্টগ্রামপাড়া, ব্রিজপাড়া, কাপ্তাইপাড়া ও কেয়াংঘাট সাতঘড়িয়াপাড়ার ঘরবাড়িতে পানি ঢুকেছে। এ ছাড়া উপজেলার মুবাছড়ি ইউনিয়নের সঙ্গে সব ধরনের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। গত তিন দিন ধরেই এসব এলাকার এই অবস্থা। এখন পর্যন্ত এসব এলাকার ১২ পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার সিংগিনালা সড়কে দেখা যায়, সড়কের তিনটি জায়গায় হাঁটু ও কোমর সমান পানি। জরুরি প্রয়োজনে স্থানীয় বাসিন্দারা নৌকায় চলাচল করছেন। পানিবন্দী থাকায় ওই এলাকার শিশু, শিক্ষার্থী ও বৃদ্ধারা ভোগান্তিতে পড়েছেন।
মুবাছড়ি ইউনিয়নের এইচএসসি পরীক্ষার্থী রোসনা চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, কোমর সমান পানি পার হয়ে তাকে পরীক্ষাকেন্দ্রে যেতে হচ্ছে। বাড়ি থেকে বাড়তি পোশাক নিয়ে বের হতে হয়। পরীক্ষাকেন্দ্রের পাশের কোনো বাসায় গিয়ে পোশাক বদলে পরীক্ষায় বসেন তিনি।
চট্টগ্রামপাড়ার বাসিন্দা মো. হোসেন আলী বলেন, কাপ্তাই লেকের পানি বাড়ায় তাঁর বাড়ির উঠানে পানি উঠেছে। যেকোনো সময় ঘরের ভেতরেও পানি ঢুকতে পারে। এ কারণে তিনি আতঙ্কে রয়েছেন।
মহালছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু রায়হান বলেন, ‘পানিবন্দী বাসিন্দাদের খাদ্যসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এর বাইরে আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠা ১২টি পরিবারকে খাবার দেওয়া হচ্ছে।’
বান্দরবান-রাঙামাটির সড়ক বন্ধ
এদিকে বান্দরবান-রাঙামাটি সড়কে আজ সকাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিবহনমালিকেরা জানিয়েছেন, কাপ্তাই হ্রদের বাঁধের পানি ছেড়ে দেওয়ায় কর্ণফুলী নদীতে পানি প্রবাহ বেড়েছে। এ কারণে আজ সকাল সাতটা থেকে চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাটে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। এর ফলে ওই সড়ক দিয়ে বাস চলাচল করতে পারছে না। পানি বাড়ায় রাঙামাটির বিসিক শিল্পনগরীর ৩০ থেকে ৪০টি কারখানায়ও পানি উঠেছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানায়, বাঁধের উজানে টানা বৃষ্টিতে পানির চাপ বাড়ায় কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে পানির প্রবাহ বেড়ে গেছে। নিরাপত্তার কারণে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
জানতে চাইলে বান্দরবানের পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম বলেন, ‘চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাট বন্ধ থাকায় আজ সকাল থেকে বান্দরবান-রাঙামাটি সড়কে কোনো বাস চলাচল করেনি। তবে ঘাটের দুই পাশে ছোট যান চলছে।’
সওজ রাঙামাটির নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, ‘ফেরি চলাচল এখন বিপজ্জনক। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ফেরি বন্ধ থাকবে। তবে জরুরি প্রয়োজনে বিকল্প সড়ক-কোদালা ও শীলঘাটা হয়ে যানবাহন চলতে পারে।’