ঢাকায় হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগের কবরের পাশে স্ত্রীর আহাজারি। আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বরগুনা সদর উপজেলার ৭ নম্বর ঢলুয়া ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে
ঢাকায় হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগের কবরের পাশে স্ত্রীর আহাজারি। আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বরগুনা সদর উপজেলার ৭ নম্বর ঢলুয়া ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে

পুরান ঢাকায় নৃশংস হত্যাকাণ্ড: নিরাপত্তাহীনতায় লাল চাঁদের পরিবার, বাড়িতে মাতম

‘পরিবারের একমাত্র আয়ের লোককে ওরা খুন করেছে। এখন কীভাবে চলবে সংসার? দুই সন্তানের ভবিষ্যতের কী হবে? আমরা কীভাবে বেঁচে থাকব? কে আমাদের নিরাপত্তা দেবে? আমার সন্তান তার বাবাকে আর দেখবে না। আমার সব শেষ হয়ে গেছে।’ বিলাপ করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার লাল চাঁদ ওরফে সোহাগের (৩৯) স্ত্রী লাকি বেগম।

লাল চাঁদের মরদেহ গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে বরগুনায় নিয়ে আসেন স্বজনেরা। সদর উপজেলার ৭ নম্বর ঢলুয়া ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে মায়ের কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়। গ্রামের বাড়িতে এখন চলছে মাতম।

স্বজনেরা বলেন, তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে এখনো হত্যাকারীদের লোকজন মুঠোফোনে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। লাল চাঁদের ১০ বছর বয়সী ছেলে সোহান ও ১৪ বছর বয়সী মেয়ে সোহানা। স্ত্রী লাকি বেগম (৩০) জানেন না, কীভাবে বিদ্যালয়পড়ুয়া এই দুই সন্তানকে সান্ত্বনা দেবেন!

স্বজনদের ভাষ্য, লাল চাঁদ যখন সাত মাস বয়সী, তখন বজ্রপাতে মারা যান তাঁর বাবা আইউব আলী। এরপর জীবিকার তাগিদে মা আলেয়া বেগম বরগুনা ছেড়ে ঢাকায় পাড়ি জমান। তখন থেকেই লাল চাঁদ ঢাকায় বসবাস করতেন। তিনি দীর্ঘদিন পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় ‘মেসার্স সোহানা মেটাল’ নামের একটি দোকান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটি ঘিরেই হত্যাকাণ্ডের সূত্রপাত।

স্বজনদের দাবি, মাসে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবিকে কেন্দ্র করে লাল চাঁদের সঙ্গে এলাকার একটি পক্ষের বিরোধ তৈরি হয়। চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় একপর্যায়ে তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তালাবদ্ধ করে দেয় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা। গত বুধবার বিকেলে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে লাল চাঁদকে আটক করে চাঁদার জন্য দফায় দফায় চাপ দেওয়া হয়। তাতেও রাজি না হওয়ায় তাঁকে পাথরের আঘাতে হত্যা করা হয় বলে দাবি স্বজনদের।
নিহত লাল চাঁদ স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে ঢাকার জিঞ্জিরার কদমতলী এলাকায় কেরানীগঞ্জ মডেল টাউনে বসবাস করতেন।

আজ শনিবার দুপুরে বরগুনার ইসলামপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, লাল চাঁদের স্ত্রী লাকি বেগম হাউমাউ করে কাঁদছিলেন। তাঁকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে কান্না থামাতে পারছিলেন না স্বজনেরাও।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লা পরিবারটির খোঁজখবর নিতে যান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিহত সোহাগ আমাদের দলীয় লোক। শোকাহত পরিবারটির পাশে আমরা আছি। আইনি ও আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।’

লাল চাঁদের বাড়ির সামনে অপেক্ষমাণ স্বজন ও প্রতিবেশীরা। আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বরগুনা সদর উপজেলার ৭ নম্বর ঢলুয়া ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে

লাল চাঁদের মেয়ে সোহানা বলে, ‘আমার বাবার হত্যাকারীদের শাস্তি চাই। আমাদের নিরাপত্তার জন্য সরকারপ্রধানের কাছে আবেদন করছি—আমাদের পরিবারটিকে বাঁচান। হত্যাকারীরা আমাদের বাসা লুট করতে চেয়েছিল। জানি না, ঢাকায় গেলে আমাদের কী হবে!’

নিহত লাল চাঁদের বোন ফাতিমা দাবি করেন, ঘটনার দিন ভাই তাঁকে বলেছিল, ‘ওরা আমাকে বাঁচতে দেবে না।’ তাঁর ভাইয়ের আশঙ্কা সত্যি হলো।

বরগুনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রথম আলোকে বলেন, পরিবারটিকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করা হবে। নিরাপত্তার বিষয়টিও নিশ্চিত করা হবে।