মেঘনা নদীতে যাত্রীবাহী দুই লঞ্চের সংঘর্ষে চারজন নিহতের ঘটনায় এমভি অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চকে ঝালকাঠি লঞ্চঘাট থেকে আটক করেছে নৌ পুলিশ
মেঘনা নদীতে যাত্রীবাহী দুই লঞ্চের সংঘর্ষে চারজন নিহতের ঘটনায় এমভি অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চকে ঝালকাঠি লঞ্চঘাট থেকে আটক করেছে নৌ পুলিশ

দুই লঞ্চের সংঘর্ষে নিহত ৪

ঝালকাঠিতে ‘এমভি অ্যাডভেঞ্চার-৯’সহ ৪ কর্মী আটক

মেঘনা নদীতে যাত্রীবাহী দুটি লঞ্চের সংঘর্ষে চারজন নিহত হওয়ার ঘটনায় এমভি অ্যাডভেঞ্চার-৯ নামে একটি লঞ্চকে ঝালকাঠি লঞ্চঘাট থেকে আটক করেছে নৌ পুলিশ। আজ শুক্রবার সকালে বরিশাল নৌ পুলিশের একটি দল লঞ্চটি আটক করে হেফাজতে নিয়েছে। এ সময় লঞ্চে থাকা চারজন কর্মীকে আটক করা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশাল নৌ পুলিশের পুলিশ সুপার নাজমুল হক। এ সময় ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমতিয়াজ আহমেদের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল নৌ পুলিশ দলকে সহায়তা করে।

গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা ও হরিণা এলাকার মাঝামাঝি স্থানে ঘন কুয়াশায় দুই লঞ্চের সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে। পরে দুর্ঘটনাকবলিত এমভি জাকির সম্রাট-৩ লঞ্চের হতাহত যাত্রীদের ঢাকার সদরঘাটে পাঠানো হয়। এমভি অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চটি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে ঢাকায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে নেতা-কর্মীদের নিয়ে ঝালকাঠিতে ফিরছিল। আজ সকাল ১০টার দিকে ঝালকাঠি টার্মিনালে লঞ্চটি নোঙর করে। লঞ্চটি ঝালকাঠির ঘাটে ভিড়তেই সব কর্মচারী পালিয়ে যান। পরে পুলিশ ইঞ্জিনরুম থেকে চারজন কেবিনবয়কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে।

পুলিশ ও জেলা বিএনপির সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার রাতে ঝালকাঠি লঞ্চঘাট থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে ঢাকায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঝালকাঠি থেকে জেলা বিএনপির প্রায় দুই হাজার নেতা-কর্মী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায় এমভি অ্যাডভেঞ্চার-৯। ঝালকাঠি-২ (ঝালকাঠি সদর ও নলছিটি) আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ইসরাত সুলতানা ওরফে ইলেন ভুট্টো লঞ্চটি নেতা-কর্মীদের জন্য ভাড়া করেছিলেন। নিজাম শিপইয়ার্ডের মালিকানাধীন এ লঞ্চ বরিশাল ঢাকা-রুটে চলাচল করে। লঞ্চে থাকা বিএনপির অন্তত ৩০ কর্মী আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিরা সবাই বরিশালের শের–ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানা গেছে।

ইসরাত সুলতানার ব্যক্তিগত সহকারী নাজমুল হক বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে ঢাকায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নেতা-কর্মীদের যোগ দিতে ইসরাত সুলতানা লঞ্চটি ভাড়া করেছিলেন। তবে দুর্ঘটনার সময় তিনি লঞ্চে ছিলেন না। এ ঘটনায় তিনি অত্যন্ত মর্মাহত।

আজ সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, পুলিশ ইঞ্জিনরুমের তালা ভেঙে লঞ্চের কর্মীদের আটক করার চেষ্টা করছে। লঞ্চের নিচতলার সামনের মাস্তুলের কার্নিশে রক্তের দাগ। একজন নারীর পায়ের এক জোড়া স্যান্ডেল পড়ে আছে। উৎসুক জনতা ভিড় করছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের চাঁদপুরের ট্রাফিক পরিদর্শক বাবুলাল বৈদ্য জানান, ভোলার ঘোষেরহাট থেকে ছেড়ে আসা ঢাকা অভিমুখী এমভি জাকির সম্রাট-৩ লঞ্চটি গতকাল রাত দুইটার পর হাইমচর এলাকা অতিক্রম করছিল। এ সময় নদীতে ঘন কুয়াশা ছিল। ঢাকা থেকে বরিশালগামী এমভি অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চের সঙ্গে ওই লঞ্চের সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই একজন নিহত হন। পরে আরেকটি যাত্রীবাহী লঞ্চ এমভি কর্ণফুলী-৯-এর মাধ্যমে জাকির সম্রাট-৩-এর যাত্রীদের ঢাকায় পাঠানো হয়।

বরিশাল নৌ পুলিশের পুলিশ সুপার নাজমুল হক বলেন, ‘ঘাতক অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চটি আমরা আটক করতে সক্ষম হয়েছি। পুলিশ চারজন কেবিনবয়কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। আমরা তদন্ত করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।’