
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে—এমন রাজনীতিতে জড়িত হওয়ার বিষয়ে শিক্ষকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার (সি আর আবরার)। তিনি আজ সোমবার দুপুরে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী (বিশ্ববিদ্যালয় দিবস) উপলক্ষে আয়োজিত একাডেমিক এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে এ কথা বলেন।
শিক্ষা উপদেষ্টা শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেন, ‘কেউ যদি মনে করেন আমি রাজনীতি করব, অবশ্যই আপনি রাজনীতির অঙ্গনে চলে যান। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়ে দিন। কারণ, রাজনীতিতে যোগ্য লোকের দরকার আছে। সেখানে আপনি সম্মান পাবেন। কিন্তু পঙ্কিল রাজনীতি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে আনবেন না।’
অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপদেষ্টা প্রধান অতিথি ছিলেন। সভাপতিত্ব করেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহাম্মদ ইসমাইল। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হায়দার আলী, জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ।
শিক্ষা উপদেষ্টা বক্তব্য দিতে গিয়ে বিগত সরকারের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ প্রসঙ্গেও কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘বিগত দিনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগ হতো না। সেখানে ভোটার নিয়োগ হতো। এ ধরনের বাস্তবতা আমরা পার হয়ে এসেছি। আমাদের সবকিছুকে ঢেলে সাজাতে হবে। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ফিরিয়ে আনতে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।’
একশ্রেণির শিক্ষকের পাঠদানের নিষ্ঠা নিয়েও উপদেষ্টা প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি, যেখানে ৩০-৪০টা ক্লাস নেওয়ার কথা, সেখানে আমাদের বন্ধু শিক্ষকেরা ৪-৫টা ক্লাস নিতেন। দেরি করে ক্লাসে ঢুকে সময়ের আগে বেরিয়ে আসতেন।’
বিগত সরকারের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গণরুম প্রথা এবং নানা অব্যবস্থার কথা বলতে গিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যে গণরুম বছরের পর বছর থেকেছে, তা নিয়ে শিক্ষক হিসেবে আমরা কিছুই করতে পারিনি। এর প্রতিবাদ পর্যন্ত আমরা করতে পারিনি। সেই ধরনের বাস্তবতার মধ্যে আমরা ছিলাম। সকালে যখন ক্লাসে ছাত্ররা আসত, তখন অনেককে দেখতাম ঝিমিয়ে পড়তে। জানতে চাইলে বলতে, বড় ভাইয়েরা তাদের প্যারেড করতে বলেছে।’
শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল সমতাভিত্তিক সমাজ তৈরির। কিন্তু যে রাষ্ট্র আমরা পেলাম, সে রাষ্ট্রে সমতাভিত্তিক সমাজ হয়নি। আমরা নাগরিক ছিলাম। কিন্তু নাগরিক থেকে বানানো হয়েছে অধিকারহীন প্রজায়। কোনো অধিকার আমাদের ছিল না।’
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘গত ১৭ বছরে শিক্ষাকে দুমড়েমুচড়ে ফেলা হয়েছে। এখন মেধাকে যদি আমরা লালন করতে পারি এবং তাকে স্বীকৃতি দিতে পারি, তাহলে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ ঠেকাতে পারবে না। কিছুদিন আগে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ হয়েছে। এখন আবার মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যুদ্ধ শুরু হচ্ছে। নানা রকম সংকট চলছে বিশ্বজুড়ে। এ রকম অস্থির বিশ্বে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।’
অনুষ্ঠানে ২০ জন শিক্ষককে ভাইস চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড, রিসার্চ অ্যাওয়ার্ড এবং ৩১ শিক্ষার্থীকে ডিনস অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। শিক্ষকদের হাতে এ সম্মাননা তুলে দেন শিক্ষা উপদেষ্টা।