কুমিল্লা নগরের বিষ্ণুপুর মুন্সেফ কোয়ার্টার এলাকায় চালু হয়েছে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট ‘খায়রুন্নেসা-ইব্রাহিম জেনারেল হাসপাতাল’। বিশেষায়িত এই হাসপাতালে উন্নতমানের স্বাস্থ্যসেবা পাবেন ডায়াবেটিক রোগীরা। পাশাপাশি সব রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা ও অত্যাধুনিক ডায়াগনস্টিক সেবাও মিলবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
আজ শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সকালে এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে হাসপাতালটির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন অর্ন্তবর্তী সরকারের মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তিনি। উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, এই হাসপাতাল কুমিল্লার স্বাস্থ্যসেবায় নতুন দিগন্ত সৃষ্টি করবে। ঢাকায় গিয়ে নয়, এখন থেকে কম খরচে কুমিল্লাতেই ডায়াবেটিকসহ যেকোনো রোগের উন্নত সেবা পাবেন রোগীরা।’
হাসপাতালটি নির্মাণ করেছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমাজসেবা অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি। কুমিল্লার বাসিন্দা জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক সচিব প্রয়াত এ টি এম শামসুল হক এই প্রতিষ্ঠান নির্মাণের জন্য ১ দশমিক ২৫ একর) সম্পত্তি বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতিকে দান করেছেন। ভব্যিষতে এই সম্পত্তিতে একটি মেডিকেল কলেজ ও একটি নার্সিং কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি কর্তৃপক্ষ।
‘শৃঙ্খলাই জীবন’ স্লোগানে আস্থার স্বাস্থ্যসেবার ব্রত নিয়ে যাত্রা শুরু করা খায়রুন্নেসা-ইব্রাহিম জেনারেল হাসপাতালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অথিতির বক্তব্য দেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ আবু ইউসুফ। অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রয়াত এ টি এম শামসুল হকের রুহের মাগফিরাত কামনায় দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির মহাসচিব মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন, ন্যাশনাল হেলথকেয়ার নেটওয়ার্ক (এনএইচএন) বোর্ড অব অ্যাডভাইজার্সের চেয়ারম্যান সৈয়দ রেজওয়ানুল কবির, কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এ বি এম মশিউজ্জামান, জেলার ডেপুটি সিভিল সার্জন রেজা মো. সারোয়ার আকবর, অধ্যাপক হাজেরা মাহাতাব, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত এটিএম শামসুল হকে সহধর্মিণী রাবেয়া হক, ন্যাশনাল হেলথকেয়ার নেটওয়ার্কের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. এম এ সামাদ প্রমুখ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কুমিল্লার রাজনৈতিক ব্যক্তি, বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, এলাকার জনসাধারণ, গণমাধ্যমকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষ চিকিৎসকের সমন্বয়ে এ বিশেষায়িত হাসপাতাল হবে দেশের অন্যতম সেরা স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র। এই হাসপাতালে দেশের স্বাস্থ্যসেবায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে এবং সবার জন্য বিশ্বমানের চিকিৎসা নিশ্চিত করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির মহাসচিব মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন বলেন, প্রয়াত এ টি এম শামসুল হক প্রায় ১৫ বছর আগে এই মূল্যবান জায়গাটি বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতিকে দান করে গেছেন। তিনি চেয়েছেন এখানে তাঁর মা খায়রুন্নেসার নামে হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ এবং স্ত্রী রাবেয়া হকের নামে একটি নার্সিং কলেজ হবে। আজ ১০০ শয্যা হাসপাতাল চালু হয়েছে। ভবিষ্যতে এই হাসপাতালকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করে এখানে মেডিকেল কলেজ করার পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি দ্রুত সময়ের মধ্যে নার্সিং কলেজ চালু করতে চান তাঁরা।
২০২২ সালের ২০ জুলাই বার্ধক্যজনিত রোগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে মারা যান সাবেক সচিব এ টি এম শামসুল হক। তাঁর গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার শিমপুরে।