সুগন্ধা নদীতে ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজে থাকা জ্বালানি সরিয়ে নিতে কমিটি গঠন

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজ সাগর নন্দিনী-২
ছবি: প্রথম আলো

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত সাগর নন্দিনী-২ জাহাজে থাকা জ্বালানি তেল নিরাপদে সরিয়ে নিতে একটি কমিটি গতকাল বুধবার গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।। ঝালকাঠি জেলা প্রশাসকের নির্দেশে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. মামুন শিবলীর নেতৃত্বে গঠিত এই  কমিটি ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজ থেকে অবশিষ্ট জ্বালানি নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবে এ কমিটি। জ্বালানি অপসারণের কাজ করবে জাহাজ মালিকপক্ষ। এদিকে এই প্রক্রিয়া চলাকালে যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দিতে আরও দুটি জাহাজ ঘটনাস্থলে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জাহাজ দুটি হলো মার্কেন্টাইল-১৩ ও সাগর নন্দিনী-১।

দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজটির মালিকানা প্রতিষ্ঠান এসএইচআর নেভিগেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ বদরুল আলম জানান, ‘আমাদের পক্ষ থেকে বিস্ফোরিত জাহাজে কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়নি। বিস্ফোরণের আগে জাহাজের সবাই পদ্মা অয়েল কোম্পানির ডিপোতে ছিল। জাহাজে কোনো পাম্প মেশিন, যন্ত্রপাতি কিছুই ছিল না। জাহাজ থেকে পানিমিশ্রিত তেলের নমুনা সংগ্রহ করে পদ্মা অয়েল কোম্পানিতে জমা দেওয়া হয়েছে।’

উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে জ্বালানি তেলাবাহী কোনো জাহাজ ঝালকাঠিতে না আসায় ফুরিয়ে আসছে মজুত। ফলে তেল ব্যবসায়ীদের চাহিদার তুলনায় কম সরবরাহ করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে পদ্মা অয়েল কোম্পানির এজিএম মো. আনোয়ার হোসেন জানান, অকটেনের মজুত আগের তুলনায় কম আছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজের জ্বালানি সরিয়ে ফেলা হলে জ্বালানি সরবরাহ ও পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
জাহাজটিতে এখন ৩ লাখ ৮৬ হাজার ২৪৯ লিটার পেট্রল ও ২৮ হাজার ৪৫৬ লিটার ডিজেল রয়েছে। তবে ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে পানিমিশ্রিত ফোম ব্যবহার করে। এদিকে বৃষ্টিতে খোলা থাকা তেলের চেম্বারে অবশিষ্ট তেলের সঙ্গে পানি মিশ্রিত অবস্থায় রয়েছে। এ ছাড়া ঘটনার পুরো রাত আগুন জ্বলার পর কতটুকু তেল রয়েছে, তা এখনো জানা যায়নি। ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজটি দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

জ্বালানি অপসারণ কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. মামুন শিবলী বলেন, ‘সাগর নন্দিনী-২ জাহাজটিতে পানি প্রবেশ করায় ভারী হয়ে কিছুটা দেবে গেছে। মোট আট সদস্যের এই কমিটির প্রধান কাজ হবে জাহাজটিকে ভাসিয়ে রেখে অবশিষ্ট জ্বালানি তেল সরিয়ে ফেলা। এই কাজ করবে জাহাজের মালিকপক্ষ। তবে কমিটির কিছু নির্দেশনা মেনে পরিবেশের ক্ষতি না হয়, সেদিকে খোয়াল রেখে এই কাজ করা হবে। যা আমরা তদারকি করব।’

তিনি আরও বলেন, ‘একই সঙ্গে বিস্ফোরণের কারণে জাহাজের ভেতরে থাকা ক্ষতিকারক দ্রব্য অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কাজ করবে মালিকপক্ষ। আজ থেকে আমাদের এই কমিটি কাজ করছে। তাই পর্যবেক্ষণের পরে কবে নাগাদ ও কীভাবে জ্বালানি অপসারণের কাজ শুরু হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যতটা সম্ভব দ্রুত জাহাজটি সরিয়ে নিয়ে এই নৌপথ চলাচলের জন্য নির্বিঘ্ন করা হবে।’

এই দুর্ঘটনার পরে পদ্মা অয়েল কোম্পানি সাগর নন্দিনী-২ জাহাজ থেকে জ্বালানি তেল দ্রুত খালাস করার জন্য মালিকপক্ষকে চিঠি দেয়। দুর্ঘটনার পর পদ্মা অয়েল কোম্পানির অন্য একটি জাহাজের মাধ্যমে ৪ লাখ ২৩ হাজার ৩৮৮ লিটার ডিজেল অপসারণ করে দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজটি নিমজ্জিত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা ও নিরাপদে রাখা হয়েছে। তাই মালিকপক্ষের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী অবশিষ্ট ডিজেল ও পেট্রল নিরাপদে ঝালকাঠির ডিপোতে আনলোড করার জন্য মালিকপক্ষকে বলা হয়। অন্যথায় মালিকপক্ষকে জরিমানা গুনতে হবে।

পদ্মা অয়েল কোম্পানির সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সাগর নন্দিনী-২ জাহাজে চট্টগ্রাম থেকে ঝালকাঠি ডিপোতে সরবরাহের জন্য ৪ লাখ ৬ হাজার ২৪৯ লিটার পেট্রল ও ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৮৪৪ লিটার ডিজেল আনা হয়। দুর্ঘটনার পর মৃদুলা-৫ ও সেভেন সিমাক-২ নামের দুটি জাহাজের মাধ্যমে ৪ লাখ ২৩ হাজার ৩৮৮ লিটার ডিজেল সরিয়ে ডিপোতে সরবরাহ করা হয়। সাগর নন্দিনী-২ জাহাজ ডুবে যাওয়ার আশঙ্কায় সাগর নন্দিনী-৪ জাহাজে আরও ২ লাখ ২৫ হাজার ডিজেল সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট আরও ২৮ হাজার ৪৫৬ লিটার ডিজেল সাগর নন্দিনী-২ জাহাজে আছে। অপর দিকে সাগর নন্দিনী-৪ জাহাজে ২০ হাজার লিটার পেট্রল সরিয়ে নেওয়া হয়। বাকি ৩ লাখ ৮৬ হাজার ২৪৯ লিটার পেট্রল সাগর নন্দিনী-২ জাহাজে মজুত আছে। ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজটি থেকে অবশিষ্ট জ্বালানি সরিয়ে নিতে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে।

জাহাজের মালিকানা প্রতিষ্ঠান এসএইচআর নেভিগেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ বদরুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভোলার মেঘনা নদীতে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর ডুবে যাওয়ার পর বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের কাছে সার্ভিস সনদের ছাড়পত্র পেয়ে সাগর নন্দিনী-২ জাহাজটি আবার চালু করা হয়। কিন্তু যেহেতু জাহাজটি একবার নিমজ্জিত হয়েছে, তাই প্রথমেই পদ্মা অয়েল কোম্পানি তেল পরিবহনের অনুমতি দেয়নি। এরপর কোম্পানি আবার পৃথক তদন্ত কমিটি করে খুঁটিনাটি পর্যালোচনার পর তেল সরবরাহের অনুমতি দয়ে। তাই আমরা সতর্ক থাকলেও আবার দুর্ঘটনা ঘটেছে। এখন কীভাবে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেটা কারও পক্ষে বলা সম্ভব নয়।’ এ সময় তাঁকে জাহাজটির বাবুর্চি বেলায়েত হোসেন অক্ষত থাকায় তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে কি না জানতে চাইলে সৈয়দ বদরুল আলম বলেন, তিনি পুলিশের হেফাজতে থাকায় তাঁর সঙ্গে তাঁদের কোনো কথা হয়নি।