ময়মনসিংহের ভালুকায় ৭ শতাংশ জমিতে ১৩ জাতের আঙুর চাষ করেছেন কলেজছাত্র সুমন মিয়া
ময়মনসিংহের ভালুকায় ৭ শতাংশ জমিতে ১৩ জাতের আঙুর চাষ করেছেন কলেজছাত্র সুমন মিয়া

থোকায় থোকায় ঝুলছে লাল, সবুজ ও কালো আঙুর

লাল, কালো আর সবুজ রঙের আঙুরে ভরে উঠেছে ময়মনসিংহের একটি ছোট্ট বাগান। মাত্র সাত শতাংশ জমিতে ১৩ জাতের বাহারি আঙুর চাষ করে নজর কেড়েছেন কলেজপড়ুয়া তরুণ সুমন মিয়া। ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার কৈয়াদী গ্রামের কৃষক পরিবারের সন্তান তিনি। টাঙ্গাইলের সখীপুর সরকারি মুজিব কলেজে তিনি সমাজকর্ম বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। পড়ালেখার পাশাপাশি আঙুর চাষে মন দিয়েছেন তিনি।

সুমন মিয়া বলেন, ছোটবেলা থেকেই কৃষির প্রতি তাঁর আগ্রহ। বাবার কৃষিকাজ ও স্থানীয় বাজারে পরিবারের কীটনাশকের দোকান তাঁকে কৃষিতে যুক্ত হতে উদ্বুদ্ধ করে। এলাকাজুড়ে ড্রাগন ফল, পেয়ারা, কলাসহ বিদেশি ফলের ভালো ফলন দেখে আঙুর চাষের ভাবনা আসে তাঁর মাথায়। ইউটিউব ও ফেসবুকে বিভিন্ন দেশের চাষপদ্ধতি দেখে ২০২২ সালে যশোর থেকে ভারতীয় জাতের ২৭টি আঙুরের চারা এনে তিনি নিজ বাড়ির পাশে রোপণ করেন।

প্রথম বছর ফলনে আশানুরূপ মিষ্টতা না থাকায় হতাশ হন সুমন। এরপর দুই বছর ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে চলতি বছর নতুনভাবে বাগান সাজান। নাটোর, রাজশাহী, ফরিদপুর, জামালপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৩ জাতের ৬০টি চারা সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে আছে বাইকুনর, একেলো, ভেলেজ, ডিক্সন, জয় সিডলেজ, অস্ট্রেলিয়ান কিং, ব্ল্যাক রুবি, ব্ল্যাক ম্যাজিক, থার্টি ওয়ান, মাসকাট হোয়াইট, আমেরিকান রিলায়েন্স, মার্সেল ফোর্স, ভেলক ও গ্রিন লং।

সুমন মিয়া বলেন, ‘ইউটিউবে দেখে দেখে চাষপদ্ধতি শিখেছি। লতানো গাছের জন্য উঁচু মাচা করে দিয়েছি। ২৫টি গাছ নষ্ট হয়ে গেলেও বাকি ৩৫টি গাছে এবার ফলন ভালো হয়েছে। আঙুরবাগানে শুধু ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হয়। এ ছাড়া অন্য রাসায়নিকের প্রয়োজন হয় না। এ মাসের শুরু থেকে পাকতে শুরু করেছে আঙুর। আগামী মাসের শেষে পুরো বাগানের ফল বিক্রি শেষ হবে।’

গত শনিবার সুমনের বাগান ঘুরে দেখেন ময়মনসিংহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নাছরিন আক্তার বানু। তিনি বলেন, জেলায় বাণিজ্যিকভাবে আঙুর চাষের উদাহরণ নেই। অনেকের ধারণা, এখানকার মাটিতে আঙুর টক হবে। এই ধারণা ভুল প্রমাণ করেছে সুমনের বাগান। তাঁর বাগানের আঙুর মিষ্টি। আঙুরের চারা তৈরিতেও সুমন দক্ষ হয়ে উঠছেন।

সবুজ আঙুর ৪০০ টাকা এবং লাল-কালো আঙুর ৪৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছেন সুমন মিয়া। প্রতিটি গাছে ধরেছে ১৫ থেকে ২০ কেজি আঙুর

বাগান দেখতে ও আঙুর কিনতে আসছেন স্থানীয় লোকজন। সবুজ আঙুর ৪০০ টাকা এবং লাল-কালো আঙুর ৪৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছেন সুমন। প্রতিটি গাছে ধরেছে ১৫ থেকে ২০ কেজি ফল। এখন পর্যন্ত বাগানে প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ বছরই সব খরচ উঠে যাবে আশা করছি। অনেকে আমার কাছ থেকে চারা নিয়ে চাষ শুরু করেছেন। আমি চাই বাংলাদেশে ঘরে ঘরে আঙুরের চাষ হোক। বিদেশ থেকে যেন আর আঙুর আনতে না হয়।’

সুমনের মা সুফিয়া আক্তার বলেন, বাড়ির পাশেই ছেলের শখের আঙুরবাগান। আঙুরের বাগান করার কথা শুনে প্রথমে নিষেধ করেছিলেন। ছেলে বায়না ধরায় শেষ পর্যন্ত আর না করতে পারেননি। গত বছর আঙুর হলেও সেগুলো টক হয়েছিল। কিন্তু এ বছর বাগানজুড়ে আঙুর হয়েছে, খেতেও অনেক মিষ্টি। আঙুর দেখলে মনটা ভালো হয়ে যায়। আগামী বছর ছেলেকে আরও বেশি জমিতে আঙুর চাষ করতে বলবেন বলে জানালেন।

ভালুকা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুসরাত জামান বলেন, এ উপজেলার মাটি যেকোনো ফল চাষের জন্য উপযোগী। আঙুর সামান্য অম্লীয় মাটিতে ভালো ফলন দেয়। সুমনের বাগানে এখন ভালো ফল দিচ্ছে। সরকারি সহায়তায় পলিনেট হাউস দেওয়া গেলে তিনি এ চাষে আরও বিস্তার করতে পারবেন।