ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকেরা দুই ঘণ্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পুলিশ লাঠিপেটা করে শ্রমিকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। আজ বুধবার সন্ধ্যায় ওই মহাসড়কের ছোট কাশর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও কয়েকজন শ্রমিক সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার হবিরবাড়ী ইউনিয়নের ছোট কাশর এলাকায় অ্যাডামস স্টাইল নামে একটি তৈরি পোশাক কারখানা রয়েছে। কারখানাটির প্রায় সাড়ে ৩০০ শ্রমিক গত অক্টোবর মাস থেকে বেতন পাচ্ছেন না। এর আগে শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়। তাঁরাও বেতন পাননি। বকেয়া বেতনের দাবিতে এর আগেও দুই দফা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকেরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রশাসন, কলকারখানা অধিদপ্তরসহ শিল্প পুলিশ মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বকেয়া বেতন পরিশোধের দিন নির্ধারণ করে দেয়। আজ সকাল নয়টায় বেতন দেওয়ার কথা থাকলেও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ দিনভর সময় নিতে থাকে। বিকেল চারটার দিকে কোম্পানির লোকজন জানান, তাঁরা টাকার ব্যবস্থা করতে পারেননি। ওই অবস্থায় বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে শ্রমিকেরা ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে সড়কের দুই পাশে মহাসড়কের চলাচলকারী যানবাহন ও অ্যাম্বুলেন্স আটকা পড়ে। আন্দোলনরত প্রায় ৪০০ শ্রমিকের সঙ্গে যোগ দেন আরও কয়েক শ লোক।
পুলিশ জানায়, আজ বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ করে রাখায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে শ্রমিকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে চেষ্টা করে। কিন্তু সেখানে থাকা শ্রমিকদের আরেকটি পক্ষ রাস্তা না ছাড়ার ঘোষণা দেয়। ওই অবস্থায় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের বাগ্বিতণ্ডার এক পর্যায়ে লাঠিপেটা শুরু করে পুলিশ। ওই সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেলও নিক্ষেপ করা হয়। এতে পুলিশের তিনজন সদস্য আহত হন। এ সময় অন্তত ২০ শ্রমিকও আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। এ সময় একটি বাসেও ভাঙচুর চালানো হয়।
কয়েকজন শ্রমিক বলেন, ‘বেতন না পাওয়ায় তাঁরা বাসাভাড়া দিতে পারছেন না, ঘরে খাবার কিনতে পারছেন না। আজ বেতন দেওয়ার কথা ছিল। সারা দিন অপেক্ষা করার পর বলা হচ্ছে আজ বেতন দেবে না। কবে দেবে তা–ও অনিশ্চিত। কারখানার কোনো লোকও আসেননি। আমরা বকেয়া বেতনের দাবিতে রাস্তায় অবস্থান নিলে পুলিশ লাঠিপেটা করে।’
শিল্প পুলিশ-৫-এর পুলিশ সুপার (এসপি) আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, কারখানাটির শ্রমিকদের বকেয়া বেতনের চলমান সমস্যা কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। আজ বেতন দেওয়ার কথা থাকলেও টাকা ম্যানেজ না হওয়ায় শ্রমিকদের বেতন দেওয়া হয়নি। দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করলে অনেক যানবাহন মহাসড়কে আটকা পড়ে। রোগীবাহী অনেক অ্যাম্বুলেন্সও ছিল। শ্রমিকদের বুঝিয়ে সরিয়ে দিতে চাইলে কিছু বহিরাগত শ্রমিকদের উসকে দেয়। এ সময় মৃদু লাঠিপেটা করতে হয়। এ সময় তিনজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘শ্রমিকদের প্রতিনিধিকে আমার কার্যালয়ে আসতে বলেছি। আমরা আলোচনা করে কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বকেয়া আদায়ের ব্যবস্থা করব।’