
সোনার গয়না চুরির অভিযোগে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আটকে রেখে প্রথমে গাছে বেঁধে নির্যাতনের পর ছেড়ে দেওয়া হয় এক কিশোরকে। কয়েক দিন পর ফের ওই কিশোরকে মায়ের সামনে প্রকাশ্যে পেটাতে পেটাতে লাঠি ভেঙে ফেলেন এক প্রবাসী। কুষ্টিয়ার কুমারখালীর নন্দলালপুর ইউনিয়নের চড়াইকোল এবং কুমারখালী পৌরসভার তেবাড়িয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সোমবার সকাল থেকে ওই কিশোরকে মারধরের একটি ভিডিও ক্লিপ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে (ভাইরাল)। মারধরের শিকার ওই কিশোর ১৫ বছর বয়সী। সে কুমারখালী পৌরসভার তেবাড়িয়া এলাকা বাসিন্দা, তারা বাবা মৃত। চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪ দশমিক ৮২ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে ওই কিশোর। যাঁর বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তাঁর নাম মাজেদ প্রামাণিক। তিনি সৌদিপ্রবাসী। উপজেলার নন্দলালপুর ইউনিয়নের চড়াইকোল বোর্ড অফিস এলাকার নিজাম প্রামাণিকের ছেলে।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একটি লাঠি দিয়ে ওই কিশোরকে পেটাচ্ছেন মাজেদ। পেটানোর এক পর্যায়ে লাঠি ভেঙে গেলে একটি ইট দিয়ে মারার জন্য তেড়ে যান মাজেদ। এ সময় সেখানে ওই কিশোরের মাসহ আরও কয়েকজন দাঁড়িয়ে ছিলেন। ছেলেকে মারধর দেখে মা উচ্চস্বরে কাঁদছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় ১৫ দিন আগে প্রবাসী মাজেদের ছেলের সুন্নতে খতনা অনুষ্ঠান ছিল। দাওয়াত পেয়ে ওই কিশোর মাজেদের বাড়িতে গিয়েছিল। অনুষ্ঠানের দিন মাজেদের স্ত্রী রুমা খাতুনের প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার সোনার গয়না চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সন্দেহ হওয়ায় ১৮ আগস্ট সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে ওই কিশোরকে তুলে নিয়ে যান মাজেদ ও তাঁর লোকজন। পরে মাজেদের বাড়িতে আটকে রেখে গাছে বেঁধে নির্যাতন করা হয় ওই কিশোরকে। পরদিন ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর ২৩ আগস্ট সকালে ওই কিশোরের বাড়িতে গিয়ে ফের তাকে লাঠি দিয়ে ব্যাপক মারধর করে লাঠি ভেঙে ফেলেন মাজেদ। তবে আজ সোমবার সকাল থেকে মারধরের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক ভাইরাল হয়।
ভুক্তভোগী পরিবারটির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই কিশোর ও তার পরিবারকে মানসিক চাপে রাখছিলেন মাজেদ। একপর্যায়ে মাজেদের হাত থেকে রেহাই পেতে গত ২৯ আগস্ট কুমারখালী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন ওই কিশোরের মা। এবার অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছেন বলে ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে ওই কিশোরের মা বলেন, ‘মিথ্যা চুরির অপবাদ দিয়ে আমার ছেলেকে মাজেদ ও তার লোকজন কয়েক দফা মারধর করেছে। আমাকেও গলা চেপে ধরে মেরেছে। আমি সঠিক বিচারের আশায় থানায় অভিযোগ দিয়েছি। এখন অভিযোগ তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে মাজেদ।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে মাজেদের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে মাজেদের ভাই মাসুম প্রামাণিকের দাবি, ওই কিশোর অনুষ্ঠানের দিন বাড়ি থেকে মাজেদের স্ত্রীর ১০–১২ লাখ টাকার সোনার গয়না চুরি করেছে। কয়েকবার সে স্বীকার করেও ফেরত দিচ্ছে না। এসব নিয়ে তাঁরা ঝামেলায় আছেন। কিশোরকে মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে মাসুম বলেন, উভয় পক্ষই আত্মীয়। নিজেরা বসাবসি করে সমাধান করা হবে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খোন্দকার জিয়াউর রহমানের সরকারি কাজে ব্যবহৃত মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি সংযোগ কেটে দেন। তবে থানার একটি সূত্র জানিয়েছে, কিশোরকে মারধরের ঘটনায় তাঁর মা থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টির তদন্ত চলছে।