পদ্মা সেতুর টোল প্লাজার সামনে এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন। শনিবার বিকেলে
পদ্মা সেতুর টোল প্লাজার সামনে এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন। শনিবার বিকেলে

ঢাকার যুবদল নেতার বিরুদ্ধে শরীয়তপুরের পরিবহনে চাঁদাবাজির অভিযোগ, এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ

ঢাকা-শরীয়তপুর রুটে চলাচলকারী একটি পরিবহন কোম্পানির কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানা যুবদলের সাবেক এক নেতার বিরুদ্ধে। চাঁদা না পেয়ে গত বুধবার থেকে ওই নেতার সমর্থকেরা ‘শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস’ নামের ওই কোম্পানির কোনো বাস যাত্রাবাড়ীতে ঢুকতে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ।

এ ঘটনার প্রতিবাদে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজার সামনে এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করা হয়েছে। শনিবার বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও শরীয়তপুরের সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে এ কর্মসূচি শুরু হয়।

৪৫ মিনিটের কর্মসূচিতে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে প্রায় এক কিলোমিটারের বেশি যানজট তৈরি হয়। আটকা পড়ে কয়েক শ পণ্যবাহী যান। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে কর্মসূচি শেষ হলে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্ত দিয়ে যানবাহন পারাপার শুরু হয়।

পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকরাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজার সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। যে কারণে কিছুক্ষণ ঢাকামুখী যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। পুলিশের অনুরোধে অবরোধকারীরা কর্মসূচি শেষ করলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শরীয়তপুর জেলার আহ্বায়ক ইমরান আল নাজির প্রথম আলোকে বলেন, যাত্রাবাড়ীতে যুবদলের এক নেতা শরীয়তপুরের একটি পরিবহন কোম্পানির কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা নিচ্ছেন। ওই নেতা ও তাঁর লোকজন আরও বেশি চাঁদার দাবিতে তিন দিন ধরে শরীয়তপুরের কোনো বাস যাত্রাবাড়ীতে যেতে দিচ্ছে না। শরীয়তপুরের বেশ কয়েকজন পরিবহনশ্রমিককে মারধর করেছে। তাঁদের যানবাহন ভাঙচুর করেছে। কোনো রাজনৈতিক দলের এভাবে চাঁদাবাজি করে মানুষকে জিম্মি করার ঘটনা বাংলাদেশে করতে দেওয়া হবে না। তাঁরা প্রশাসনের কাছে ওই চাঁদাবাজ চক্রকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় তাঁরা বড় ধরনের কর্মসূচি দেবেন।

অভিযুক্ত যুবদল নেতার নাম মুশফিকুর রহমান ওরফে ফাহিম। তিনি যাত্রাবাড়ী থানা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি।

শরীয়তপুরের বাস মালিক ও শ্রমিকদের অভিযোগ, মুশফিকের সমর্থকেরা গত তিন দিনে তাঁদের ১০টি বাস ভাঙচুর ও ১২ জন শ্রমিককে পিটিয়ে আহত করেছেন। এ ঘটনায় শরীয়তপুর জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন হাওলাদার যাত্রাবাড়ী থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিকার চেয়ে ঢাকার পুলিশ কমিশনার, ঢাকা রেঞ্জের উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি), যাত্রাবাড়ী সেনা ক্যাম্প, র‍্যাব ক্যাম্প, শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে চিঠি দিয়েছেন।

বাসমালিক ও শ্রমিকেরা জানান, পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে ঢাকার সঙ্গে শরীয়তপুরের সরাসরি বাস চলাচল শুরু হয়। শরীয়তপুরের আটটি কোম্পানির অন্তত ২৫০টি বাস চলাচল করছে। এর মধ্যে জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের অধীনে ‘শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস’ নামের কোম্পানির বাস চলে ১৭০টি। শরীয়তপুর শহর ও নড়িয়া থেকে এসব বাসে প্রতিদিন শরীয়তপুরের কয়েক হাজার মানুষ ঢাকার যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত যাতায়াত করেন।

মানববন্ধন কর্মসূচির কারণে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে এক কিলোমিটার বেশি যানজট তৈরি হয়। শনিবার বিকেলে

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত বছরের ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর যাত্রাবাড়ীতে বাসের কাউন্টারগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেন যুবদলের সাবেক নেতা মুশফিকুর রহমান। তিনি ‘শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস’ থেকে প্রতি মাসে আট লাখ টাকা চাঁদা নেন।

তবে কয়েক দিন ধরে তিনি এককালীন ৫০ লাখ টাকা চাঁদা ও ‘শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস’ কোম্পানির নামে ১০টি বাস চালানোর দাবি করেন। কিন্তু বাসমালিকেরা দাবি না মানলে যাত্রাবাড়ীতে শরীয়তপুরের বাস যেতে বাধা দেন মুশফিকের লোকজন। শ্রমিকেরা যাত্রাবাড়ী যেতে না পেরে ধোলাইপাড় পর্যন্ত গিয়ে যাত্রী নামিয়ে আবার শরীয়তপুরে ফিরে আসছেন।

জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি ও শরীয়তপুর সুপার সার্ভিসের চেয়ারম্যান ফারুক আহম্মেদ তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা সহায়তা চেয়ে পুলিশ, সেনাবাহিনী, র‍্যাব ও প্রশাসনকে জানিয়েছেন। থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

শরীয়তপুর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারুক চৌকিদার বলেন, ‘চাঁদাবাজ ফাহিমের কারণে আমরা বাস নিয়ে যাত্রাবাড়ী যেতে পারছি না। তারা আমাদের শ্রমিকদের মারধর করে গাড়ি ভাঙচুর করছে। এমন পরিস্থিতি বন্ধ না হলে আমরা বাস চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেব। প্রয়োজনে পদ্মা সেতু দিয়ে সব জেলার বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে।’
অভিযোগের বিষয়ে যুবদলের সাবেক নেতা মুশফিকুর রহমানের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও বন্ধ থাকায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে যাত্রাবাড়ী থানার ওসি কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ফাহিম নামের একজনের বিরুদ্ধে বাস চলাচলে বাধা দেওয়া, চাঁদা দাবি, শ্রমিকদের মারধর করে বাস ভাঙচুর করার অভিযোগ করেছেন এক বাসমালিক। পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করছে। কেউ যাতে যাত্রাবাড়ীতে বাস চলাচলে বাধা দিতে না পারে, সেই উদ্যোগ নেওয়া হবে।