তেলবাহী জাহাজে অগ্নিকাণ্ড

আগুনে পুড়ে বিকৃত লাশ দুটি শনাক্ত করলেন স্বজনেরা

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উদ্ধার অভিযান চলছে। আজ সোমবার সকালে
ছবি: প্রথম আলো

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে সাগর নন্দিনী-২ নামের জ্বালানি তেলবাহী জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সর্বশেষ উদ্ধার হওয়া দুজনের লাশ পুড়ে বিকৃত হয়ে গেছে। শারীরিক গঠন দেখে পরিবারের সদস্যরা লাশ দুটি শনাক্ত করেছেন। পরে লাশ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

স্বজনদের উদ্ধৃতি দিয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঝালকাঠি সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. নজরুল ইসলাম। তিনি জানান, নিহত দুজন হলেন জাহাজের সুপারভাইজার চাঁদপুরের মাসুদুর রহমান ওরফে বেল্লাল (৪৮) ও চালক বরিশালের বাকেরগঞ্জের নলুয়া গ্রামের রুহুল আমিন (৫৫)।

জাহাজের চালক রুহুল আমিন

জাহাজের বিস্ফোরিত হওয়া ইঞ্জিন রুমের ওপরের অংশের মাস্টার কেবিনের একটি খণ্ড আজ সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সুগন্ধা নদী থেকে উত্তোলন করে উদ্ধারকারী জাহাজ নির্ভীক। সেই কেবিনের মধ্য থেকে একটি লাশ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার অভিযান চলার মধ্যে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে আরেকটি লাশ পাওয়া যায়।
লাশ উদ্ধার অভিযানে ছিলেন বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের সদস্য সাকিব হোসেন। তিনি বলেন, লাশ দুটি আগুনে পুড়ে বিকৃত হয়ে গেছে। পরিবারের সদস্যরা শারীরিক গঠন, পোশাকসহ অন্যান্য বিষয় দেখে তাঁদের শনাক্ত করেছেন।

নিহত সুপারভাইজার মাসুদুর রহমানের মামাতো ভাই জি এম জাকির সুগন্ধা নদীর তীরে লাশ শনাক্তের জন্য এসেছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাইয়ের মুখের দাঁড়ি ও হাতের ঘড়ি দেখে পরিচয় নিশ্চিত হয়েছি। তাঁর মৃত্যুতে তিনটি শিশুপুত্র এতিম হয়ে গেল।’

এদিকে নিখোঁজ তৃতীয় ব্যক্তির লাশটিও সুগন্ধা নদীর তলদেশে তেলের জাহাজের ইঞ্জিন রুমের মাস্টার কেবিনের একটি খণ্ডের মধ্যে দেখতে পেয়েছে উদ্ধারকারী দল। ধারণা করা হচ্ছে, সেই ব্যক্তিটি জাহাজের নিখোঁজ কর্মী পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার উদয়তারা বুড়িরচর গ্রামের মন্নান খানের ছেলে আকরাম হোসেন (৪০)।

উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া কোস্টগার্ডের অপারেশন ইউনিট কমান্ডার লেফটেন্যান্ট শাফায়েত হোসেন বলেন, নিখোঁজ তৃতীয় ব্যক্তির লাশটির সন্ধান পাওয়া গেছে। উদ্ধারকারী জাহাজ নির্ভীকের ক্রেন ছিঁড়ে যাওয়ায় সাময়িক উদ্ধারকাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।

এর আগে গতকাল রোববার বেলা আড়াইটার দিকে বিস্ফোরিত হওয়া ইঞ্জিন রুমের ওপরের একটি মাস্টার কেবিনের অংশের মধ্য থেকে জাহাজের গ্রিজার আবদুস সালাম ওরফে হৃদয়ের (২৬) লাশ উদ্ধার হয়। ময়নাতদন্ত শেষে আজ পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।

সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম বলেন, উদ্ধার হাওয়া লাশ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। পরে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে।

গত শনিবার বেলা দুইটার দিকে সুগন্ধা নদীর তীরের সরকারি তেলের ডিপোর কাছে সাগর নন্দিনী-২ নামের একটি জ্বালানি তেলবাহী জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনা ঘটে। এক সপ্তাহ আগে তেলবাহী জাহাজটি চট্টগ্রাম থেকে এসে ঝালকাঠি সুগন্ধা নদীর তেলের ডিপো-সংলগ্ন এলাকায় নোঙর করে। জাহাজটিতে প্রায় ১১ লাখ লিটার জ্বালানি তেল (পেট্রল, ডিজেল) ছিল। এটি রাষ্ট্রমালিকানাধীন পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ডিপোতে খালাস করার অপেক্ষায় ছিল। পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটিতে ডিপো বন্ধ থাকায় তেল খালাস করা সম্ভব হয়নি।