পটুয়াখালীর ৪ আসন

আলোচনায় বিএনপির ‘ফাঁকা’ আসন, নুরুল হকের জন্য কি ছেড়ে দেওয়া হবে

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পটুয়াখালীর চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে তিনটিতে প্রার্থী দিয়েছে বিএনপি। ফাঁকা রাখা পটুয়াখালী–৩ আসনটি যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দল গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হককে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে বলে আলোচনা আছে। তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন শেষ পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

জেলার চারটি আসনেই প্রার্থী ঘোষণা করে প্রচার চালিয়ে আসছে জামায়াত। প্রচারণায় আছে ইসলামী আন্দোলনও। দুটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এখন পর্যন্ত নির্বাচনী কার্যক্রম নেই জাতীয় পার্টির (জাপা)।

পটুয়াখালী-১ (সদর, মির্জাগঞ্জ, দুমকী)

বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী। জেলা বিএনপির সভাপতি স্নেহাংশু সরকার (কুট্টি) এখানে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। নভেম্বরের শেষ দিকে দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলনও করে।

জাপার কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার প্রার্থী হতে পারেন বলে আলোচনা আছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, যেহেতু বেশ কয়েকবার তিনি এ আসন থেকে বিজয়ী হয়েছেন, সে ক্ষেত্রে জনগণের চাহিদা অনুযায়ী নির্বাচন করার আগ্রহ থাকতেই পারে। তবে সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত এবং স্বাভাবিক পরিবেশ-পরিস্থিতি তৈরি হলে তিনি অবশ্যই নির্বাচনে অংশ নেবেন।

জেলা জামায়াতের আমির নাজমুল আহসান দলীয় মনোনয়নে প্রথমবারের মতো সংসদ নির্বাচন করতে যাচ্ছেন। এ ছাড়া গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির উচ্চতর পরিষদের সদস্য মো. শহিদুল ইসলাম, এনসিপির জহিরুল ইসলাম, এবি পার্টির মেজর (অব.) আবদুল ওহাব মিনার গণসংযোগ চালাচ্ছেন। এই আসনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী আবুল হাসান বোখারী।

পটুয়াখালী-২ (বাউফল)

বিএনপি শুরুতে আসনটি ফাঁকা রেখেছিল। ৪ ডিসেম্বর দ্বিতীয় ধাপে সাবেক এমপি শহিদুল আলম তালুকদারকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। এর পর থেকে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে কেন্দ্রীয় কমিটির সহদপ্তর সম্পাদক মু. মুনির হোসেনের কর্মী–সমর্থকেরা বিক্ষোভ করছেন। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল জব্বার মৃধার অভিযোগ, শহিদুল আলম দুর্দিনে কোনো নেতা-কর্মীর খোঁজখবর নেননি। এমন ব্যক্তিকে তাঁরা কোনোভাবেই মেনে নেবেন না।

জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম (মাসুদ) এখানে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘জনগণ সব দল দেখেছে। সবাই দুর্নীতি করেছে, কেউ জনরোষে দেশ ছেড়েছে। আবার কেউ বিশ্বদরবারে দুর্নীতির তালিকায় নিজ ও দেশের নাম লিখিয়ে দেশকে কলঙ্কিত করেছেন। তাই মানুষ এবার নির্বিঘ্নে দাঁড়িপাল্লায় ভোট দেবে।’

এ ছাড়া দলীয় মনোনয়ন পেয়ে ইসলামী আন্দোলনের আবদুল মালেক আনোয়ারী, এনসিপির মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন ও খেলাফত মজলিসের মোহাম্মদ আইউব বিন মুসা নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন।

পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা)

বিএনপি এখনো প্রার্থী দেয়নি। যুগপৎ আন্দোলনের শরিক গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হককে আসনটিতে ছাড় দেওয়া হতে পারে বলে আলোচনা আছে। তিনি নিয়মিত এলাকায় প্রচার–প্রচারণা চালাচ্ছেন। ডাকসুর সাবেক এই ভিপির গণসংযোগ ও সাংগঠনিক কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য গত বছরের অক্টোবরে কেন্দ্রীয় বিএনপির পক্ষ থেকে স্থানীয় নেতা–কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

এখানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনি মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। হাসান মামুন বলেন, ‘এখন আর নুরকে এখানে স্থান দেওয়ার পরিবেশ-পরিস্থিতি নেই। নুরকে কোনোভাবেই মূলধারার বিএনপি গ্রহণ করবে না।’

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপিসহ কয়েকটি দলের সঙ্গে জোট গঠনের আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন নুরুল হক। মিত্র দলগুলোকে আসন ছেড়ে দিতে বিএনপি অনেক আসনে প্রার্থী দেয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, হাসান মামুন নির্বাচন করতেই পারেন। কিন্তু তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় দেওয়া বক্তব্যগুলো উত্তেজনামূলক, যা স্বাভাবিক নির্বাচন পরিবেশকে বিঘ্নিত করছে।

এখানে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে প্রচারণায় আছেন মু. শাহ আলম। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী আবু বকর সিদ্দিক প্রচারণা চালাচ্ছেন। এ ছাড়া জেলা যুবদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. শিপলু খানও প্রার্থী হতে প্রচারণা করছেন।

পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী)

বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশারেফ হোসেন দলীয় মনোনয়ন পেয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মো. মোস্তাফিজুর রহমান জোরেশোরে গণসংযোগ করে আসছেন। তিনি ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি থেকে এমপি হয়েছিলেন। চলতি বছর তিনি ইসলামী আন্দোলনে যোগ দেন। মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিএনপি এখন জনগণ থেকে শতভাগ বিচ্ছিন্ন একটি রাজনৈতিক দল। তাই জনগণ নির্বিঘ্নে ইসলামী আন্দোলনকে ভোট দেবে।

বিএনপির প্রার্থী মোশারেফ হোসেন বলেন, অভ্যন্তরীণ কোন্দল না থাকায় দলীয় নেতা-কর্মীরা তাঁর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছেন। দল পরিবর্তন করা ব্যক্তিকে ঘিরে সমাজে নানা প্রশ্ন থাকে। তাই তাঁর নেতৃত্বে কিছু সংখ্যক লোকের লম্ফঝম্ফতে বিএনপির বিজয় আটকানো যাবে না।

এখানে জামায়াতে ইসলামীর মুহাম্মদ আবদুল কাইয়ূম, গণ অধিকার পরিষদের রবিউল হাসান এবং আমজনগণ পার্টির ফাতেমা তাসনিম প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। ইসলামী আন্দোলন থেকে বহিষ্কৃত হাবিবুর রহমান এখানে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।