
চট্টগ্রামের রাউজানে গত সোমবার গভীর রাতে দরজা বন্ধ করে আগুন দেওয়া হয়েছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের দুই পরিবারের বাড়িতে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে ওই দুই পোড়া বাড়ির ২০০ মিটার দূরে একটি সীমানা বেড়ায় টানিয়ে দেওয়া হয় রহস্যময় ব্যানার। আগুন দিয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ও সক্রিয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে দায়ী করে ব্যানারটি লেখা হয়। হাতে লেখা ব্যানারটি নিয়ে ভীতি ও শঙ্কা তৈরি হয়েছে এলাকার মানুষজনের মধ্যে।
রাউজান পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম সুলতানপুর গ্রামের দুবাইপ্রবাসী সুখ শীল এবং দিনমজুর অনিল শীলের বাড়ির কাছে ওই ব্যানার পাওয়া যায়। সোমবার দিবাগত রাত পৌনে চারটার দিকে দরজা আটকে ওই দুজনের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। বাঁশ ও টিনের বেড়া কেটে ঘর থেকে বের হয়ে পরিবার দুটির সদস্যরা প্রাণে রক্ষা পান।
গতকাল বিকেলে সরেজমিন দেখা যায়, রাউজান পৌরসভার পশ্চিম সুলতানপুরের শীলপাড়ার একেবারে বিলের মধ্যে আগুনে ভষ্মীভূত বাড়ি দুটির অবস্থান। স্থানীয় লোকজন জানান, পাশের একটি টিনের সীমানাপ্রাচীরে ওই ব্যানারটি প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে টানানো ছিল। আগুন নেভাতে যাওয়া মানুষ ভোরের আলো ফুটতেই দেখতে পান ব্যানারটি।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, গণ অধিকারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও প্রশাসন দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির জন্য দায়ী বলে ব্যানারটিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেশী সঞ্জয় বাহাদুর নামের ওই গ্রামের এক যুবক বলেন, ভোর চারটার দিকেই শোরগোল ও জিনিসপত্র পোড়ার শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। এরপর ঘটনাস্থলে ছুটে যান। আগুন নেভানোর পর ভোরের আলো ফুটলে পোড়া বাড়ির কাছে ব্যনারটি দেখেন তিনি। ব্যানারটি সকালেই পুলিশ জব্দ করে নিয়ে যায় বলে জানান সঞ্জয়। এলাকার লোকজনের মুঠোফোনে ধারণ করা ছবিতে ব্যানারটি স্পষ্ট নয়। আবার ছবি তোলার সময় কিছু অংশ কাটাও পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, গণ অধিকারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও প্রশাসন দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির জন্য দায়ী বলে ব্যানারটিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
রহস্যময় এ ব্যানার নিয়ে পুলিশ বলছে, লেখাটা বিশ্লেষণ করে তাঁরা এর রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করছেন। তবে আপাতত এ বিষয়টি নিয়ে তাঁরা বেশি কিছু জানাতে চায় না। এটা নিয়ে তাঁরা কাজ করছেন বলে জানান চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাসেল।
একই রকম ব্যানার মিলেছে আগেও
গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার রাতে রাউজান পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ঢেউয়াপাড়া গ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আরও তিনটি বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। আগুনে পোড়া ওই তিন বাড়ির পাশ থেকেও একই রকম ব্যানার উদ্ধার করা হয় বলে প্রশাসন জানায়।
রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম রাহাতুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ব্যানারে মূলত অগ্নিসংযোগের জন্য সরকার ও প্রশাসনকে দায়ী করা হয়েছে। এগুলো অগ্নিসংযোগকারীদের নোংরা ষড়যন্ত্র। পুলিশ এসব খতিয়ে দেখছে।