
পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মাইক্রোবাসে বাড়ি ফিরছিলেন চালক আখিরুল ইসলাম (২৮)। পথে একটি খোলা রেলক্রসিংয়ে হঠাৎ মাইক্রোবাসটি আটকে যায়। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় পেছন থেকে মাইক্রোবাসটি ঠেলে সরানোর চেষ্টা করছিলেন তিনি। একপর্যায়ে তাঁর পরিবারের সদস্যরা নিরাপদে দূরে সরে যান। মাইক্রোবাস অক্ষত থাকলেও ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণ হারান আখিরুল। গতকাল বুধবার রাত ৮টার পর পঞ্চগড় সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের টেংগনমারী এলাকার রেলক্রসিংয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পঞ্চগড় রেলওয়ে স্টেশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির নেতা-কর্মীদের নিয়ে রাত ৮টায় পঞ্চগড় থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া একটি বিশেষ ট্রেনের সঙ্গে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ স্থানীয় লোকজন প্রায় তিন ঘণ্টা রেলপথ অবরোধ করে রাখেন। এ ঘটনায় রাত ৯টা ১০ মিনিটে ছেড়ে আসা একতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি প্রতিরোধ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের মুখে পড়ে আবার পঞ্চগড় রেলওয়ে স্টেশনে ফিরে যায়। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে প্রায় দুই ঘণ্টা দেরিতে একতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
নিহত আখিরুল ইসলাম পঞ্চগড় সদর উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের মাগুরা-বান্দেরাপাড়া এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাইক্রোবাস চালক ছিলেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ধাক্কামারা ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পঞ্চগড় রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়লে মাত্র তিন থেকে চার মিনিটের মধ্যেই টেংগনমারী রেলক্রসিংয়ে এসে পড়ে। এখানে কোনো গেটম্যান নেই। তখন রাত আটটা তিন বা চার মিনিট। হঠাৎ টেংগনমারী এলাকার খোলা রেলক্রসিংয়ে রেললাইনে উঠতেই মাইক্রোবাসটি আটকে যায়। আখিরুল একাই নেমে মাইক্রোবাস ঠেলতে থাকেন। তখন আমরা কয়েকজন এগিয়ে গিয়ে সহায়তা করি। ট্রেন আসতে দেখে আখিরুল দ্রুত তাঁর পরিবারের সদস্যদের মাইক্রোবাস থেকে নামিয়ে দেন। মাইক্রোবাসটি ঠেলে রেললাইন পার করে সড়কে তুলতে পারলেও পেছনে ঠেলতে থাকা আখিরুল ট্রেনে কাটা পড়েন। আমাদের চোখের সামনেই তাঁর করুণ মৃত্যু হয়।’
ঘটনার পরপরই আশপাশের এলাকার শত শত মানুষ সেখানে জড়ো হন। আখিরুলের লাশ ঘটনাস্থলে রেখে তাঁরা রেললাইনে অবস্থান নিয়ে অবরোধ শুরু করেন। এ সময় তাঁরা অসময়ে ট্রেন চলাচলের প্রতিবাদ জানিয়ে ওই রেলক্রসিংয়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার, গেটম্যান নিয়োগ এবং নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান। একপর্যায়ে রাত ৯টা ১০ মিনিটে ছেড়ে আসা একতা এক্সপ্রেস ট্রেনটিও বিক্ষুব্ধ জনতা থামিয়ে দেন। প্রথম দিকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা লাশ উদ্ধার করতে গেলে বাধার মুখে পড়েন। পরে জেলা প্রশাসক কাজী মো. সায়েমুজ্জামান, পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম, সেনাবাহিনীর সদস্য ও রেলওয়ে কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আসেন। জেলা প্রশাসকের আশ্বাস পেয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। পরে রাত ১১টা ২০ মিনিটে একতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এরই মধ্যে নিহত ব্যক্তির স্বজনেরা লাশ বাড়ি নিয়ে যান।
পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘খবর পেয়ে জেলা প্রশাসকসহ আমরা ঘটনাস্থলে যাই। উত্তেজিত জনতাকে বুঝিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়। পরে রাত ১১টা ২০ মিনিটে পঞ্চগড় থেকে একতা এক্সপ্রেস ট্রেন ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।’