
বগুড়ার ধুনট উপজেলায় মর্জিনা খাতুন (৪০) নামের এক নারীকে হত্যার পর ঘরের মেঝেতে লাশ পুঁতে রাখার ঘটনায় তাঁর ছেলে রাব্বি ইসলাম ও ছেলের বউ নূপুরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাতে র্যাব-১২–এর সদস্যরা তাঁদের ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। আজ শনিবার বিকেল চারটার দিকে র্যাব ওই দুই আসামিকে ধুনট থানা-পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে।
এর আগে নিহত মর্জিনার মা রওশন আরা খাতুনকে (৫৮) গ্রেপ্তার করে ২৩ জুলাই কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এ ঘটনায় ধুনট পৌরসভার মেয়র এ জি এম বাদশাহ বাদী হয়ে ২২ জুলাই রাতে ওই তিনজনের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা করেন। মর্জিনা খাতুন চান্দারপাড়া গ্রামের মৃত আবদুল লতিফ ও রওশন আরা দম্পতির মেয়ে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১০ বছর আগে মর্জিনা খাতুনের সঙ্গে তাঁর স্বামীর ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর একমাত্র ছেলে রাব্বি ইসলামকে নিয়ে মর্জিনা তাঁর মা রওশন আরার বাড়িতে ওঠেন। রাব্বির বিয়ের পর পরিবারের সদস্য সংখ্যা হয় চার। চারজনের ওই সংসারে সহায়সম্বল বলতে উপজেলার সদর ইউনিয়নের চান্দারপাড়া গ্রামের ইছামতী নদীর চরে মাথা গোঁজার জন্য সামান্য বসতভিটা রয়েছে। জীবিকার তাগিদে নানা কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাঁরা। কয়েক মাস ধরে মর্জিনা শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর পক্ষে আর কাজ করা সম্ভব হচ্ছিল না। এ নিয়ে তাঁদের সংসারে অশান্তির সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে বাগ্বিতণ্ডা থেকে গত ৩০ জুন রাতে মর্জিনাকে তাঁরা গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। এরপর লাশ গুম করতে মা রওশন আরা ঘরের মেঝেতে পুঁতে রাখেন। পরে ওই বসতঘরের দরজায় তালা দিয়ে তাঁরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান।
নিহত মর্জিনার মা রওশন আরা জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেন এবং হত্যার বর্ণনা দেন।
২১ জুলাই সন্ধ্যার দিকে ঘর থেকে দুর্গন্ধ বের হলে স্থানীয় লোকজন পৌরসভার মেয়র এ জি এম বাদশাহকে জানান। মেয়র বিষয়টি থানা-পুলিশকে বিষয়টি অবগত করেন। ঘটনা নিয়ে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের সন্দেহ হলে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে ২২ জুলাই দুপুরে মর্জিনার মা রওশন আরাকে ঢাকা থেকে ডেকে আনে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে রওশন আরার কথাবার্তা অসংগতিপূর্ণ মনে হলে পুলিশ তাঁর ঘরের মেঝে খুঁড়ে মর্জিনার লাশ উদ্ধার করে। লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়া হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। রওশন আরা জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেন এবং হত্যার বর্ণনা দেন। এ ঘটনায় পৌর মেয়র এ জি এম বাদশাহ বাদী হয়ে রওশন আরা, রাব্বি ও নূপুরকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেন।
ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম জানান, এর আগে মামলার প্রধান আসামি রওশন আরাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। মামলার অপর দুই আসামি রাব্বি ও নূপুরকে বগুড়া র্যাব-১২ গ্রেপ্তার থানায় সোপর্দ করেছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আগামীকাল রোববার তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।