
বরগুনা জেলা বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আওয়ামী লীগের ২৩১ জন নেতা-কর্মীর নামে মামলা করেছেন স্থানীয় বিএনপির এক কর্মী। আজ বুধবার বরগুনার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুজ্জামান মামলাটি গ্রহণ করে বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। একই ঘটনায় এর আগে আরও একটি মামলা হয়েছে।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে বরগুনা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে। এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন বরগুনা-২ আসনের সাবেক এমপি শওকত হাচানুর রহমান (রিমন), সাবেক এমপি সুলতানা নাদিরা, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফারজানা রুমকি, বরগুনা সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম (মনির), বরগুনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক শাহ মোহাম্মদ ওয়ালি অলি, জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দিন (সাবু), বরগুনা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আক্তারুজ্জামান বাহাদুর ও জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌশিকুর রহমান।
মামলায় হৃদয় হোসেন (মুন্না) নামের এক সাংবাদিককেও আসামি করা হয়েছে। তিনি আজকের পত্রিকার বেতাগী উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আছেন। আসামিদের মধ্যে ধীরেন্দ্র দেবনাথ ও মনিরুল ইসলাম, বিদ্যুৎ সরকার বর্তমানে কারাগারে আছেন।
মামলাটি বিএনপির পক্ষ থেকে করা হয়নি বলে দাবি করেছেন আদালতের সরকারি কৌঁসুলি ও বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি নুরুল আমিন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত না। যিনি করেছেন, তাঁর ব্যক্তিস্বার্থের জন্য করেছেন। এতে দলের ভাবমুর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।’
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ৩০ মে বিকেলে বরগুনা পৌর শহরের জেলা বিএনপি কার্যালয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া মাহফিল চলছিল। এ সময় আসামিরা একত্র হয়ে রামদা, ছেনি, চায়নিজ কুড়াল, আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিএনপি কার্যালয় চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেন। তাঁদের সঙ্গে থাকা হাতবোমা, চকলেট বোমা, ককটেল ইত্যাদি বিস্ফোরক দ্রব্যের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ত্রাস তৈরির চেষ্টা চালান। এ ছাড়া কার্যালয়ে উপস্থিত বিএনপির বিভিন্ন নেতা–কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে, পিটিয়ে, কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন। ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের সঙ্গে ‘একটা দুইটা বিএনপি ধর, সকাল বিকাল নাশতা কর’ এমন আরও বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে বিএনপি কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করেন। এ ছাড়া কার্যালয়ে থাকা জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়াসহ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি নষ্ট করেন। এ সময় কার্যালয়ের সামনে থাকা বিএনপির বিভিন্ন নেতা–কর্মীদের মোটরসাইকেল পিটিয়ে ভাঙচুরসহ আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ১০টি মোটরসাইকেল নিয়ে যান বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়। বাদী জানান, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের মদদপুষ্ট হওয়ায় তৎকালীন প্রশাসনকে এ ঘটনা জানালেও এর কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
মামলার বাদী শহিদুল ইসলাম বিএনপির কর্মী ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য। এত পরে মামলা করার প্রসঙ্গে শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘খুনি হাসিনার আমলে আমরা মামলা করতে পারিনি। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর আমরা মামলা করেছি। তখন এ বিষয়ে প্রশাসনকে জানালেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। ক্রিমিনাল অপরাধের মামলা ১০০ বছর পরেও করা যায়। এতে কোনো আইনগত বাধা নেই।’
মামলার আসামি শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘জেলা বিএনপির নেতারা বাদী হয়ে মামলা করেন না। তাঁরা জানেন, এই রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। যারা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাগুলো করে, তাদের রাজনৈতিক কী পরিচয় আছে, আমাদের জানা নেই। এই কালচার থেকে বের হয়ে আসা উচিত।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একই ঘটনায় গত ৩০ এপ্রিল এস এম নইমুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি একটি মামলা করেন। তিনি বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত এস এম নজরুল ইসলামের ছেলে। বিশেষ ক্ষমতা আইনের পাশাপাশি এ মামলায় বিস্ফোরক আইনের ধারাও সংযোজন করা হয়।
বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর ঘটনায় আগে একটি মামলা হয়েছে। সেই মামলা বিষয় আমি কিছু জানতাম না। ওই দিন আমার মেয়ে মারা যায়। আজকে (বুধবার) যে মামলা হয়েছে, তা–ও আমি কিছু জানি না। যিনি মামলা করেছেন, দেখতে হবে তিনি মামলা করতে পারেন কি না।’