কুলিয়ারচরে ব্যাংকে অসুস্থ হয়ে পড়া ৬ কর্মী এখন সুস্থ, বিশ্রামের পরামর্শ

আইএফআইসি ব্যাংক কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপশাখায় একসঙ্গে অসুস্থ হওয়া ছয় কর্মকর্তা–কর্মচারী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন। হাসপাতাল থেকে তাঁরা আজ মঙ্গলবার সকালে কর্মস্থলে আসেন। তবে প্রধান কার্যালয়ের পরামর্শে তাঁদের কাজে যুক্ত না করে বিশ্রামে পাঠানো হয়েছে।

উপশাখাটি বর্তমানে একই জেলার বাজিতপুর শাখার চার কর্মকর্তা–কর্মচারী দিয়ে গতকাল সোমবার থেকে পরিচালনা করা হচ্ছে। ব্যাংক থেকে জানানো হয়েছে, গ্রাহকেরা স্বাভাবিক সেবা পাচ্ছেন।

একসঙ্গে সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণ অনুসন্ধানে কাজ শুরু করেছে আইএফআইসি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ব্যাংকের সাপোর্ট সার্ভিস বিভাগের দুই সদস্যের প্রতিনিধিদল গতকাল দিনব্যাপী উপশাখা কার্যালয়ে এসে কর্মকর্তা–কর্মচারীদের অসুস্থ হওয়ার কারণ শনাক্তের চেষ্টা করে। প্রতিনিধিদলে নেতৃত্ব দেন সাপোর্ট সার্ভিস বিভাগের কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম।

অনুসন্ধান দলের মূল নজর ছিল জেনারেটর সার্ভিস প্রক্রিয়ার দিকে। তাঁরা দেখতে পেয়েছেন, যেসব সাধারণ নিয়ম মেনে জেনারেটর সেবা চালু রাখা হয়, উপশাখায় বসানো জেনারেটরটি ওই সব নিয়ম মেনে স্থাপন করা হয়নি। এ ছাড়া আরও কিছু বিষয় মাথায় রেখে কাজ করেন।

কুলিয়ারচরে আইএফআইসি ব্যাংকের উপশাখার কার্যালয় থানা সড়কের হাবিব কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায়। তিন বছর আগ থেকে শাখাটির কার্যক্রম বাজিতপুর উপজেলা মূল শাখার অধীনে পরিচালিত হয়ে আসছে। দুই দিন ধরে উপশাখাটি চলছে বাজিতপুর শাখার মার্কেটিং বিভাগের সেলস অফিসার মো. মোত্তাকিন বিল্লাহর নেতৃত্বে।

মোত্তাকিন এখন উপশাখার ইনচার্জ। কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি বলেন, ব্যাংক পরিচালনায় বিশেষ কোনো সমস্যা নেই। গ্রাহকেরা আসছেন, প্রয়োজনীয় সেবা পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। উপশাখার অসুস্থ সবাই এখন সুস্থ। তাঁরা এসেছিলেন। কিন্তু কাজে যোগ দিতে দেওয়া হয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে আপাতত তাঁরা বিশ্রামে থাকবেন।
কুলিয়ারচর উপজেলার আলী আকবরী গ্রামের গ্রাহক শেখ রবিন উপশাখার একজন গ্রাহক। আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি টাকা তুলতে আইএফআইসি ব্যাংকের উপশাখাটিতে আসেন। তিনি বলেন, ‘একসঙ্গে সবাই অসুস্থ হওয়ার কথা শুনে মনে হয়েছিল, ব্যাংক লুট হয়েছে। মনে ভয় কাজ করছিল। তবে লেনদেনে আজ কোনো সমস্যা হয়নি।’

এদিকে পুলিশের দাবি, যা হয়েছে, তা নাশকতা নয়। টাকা লুটের ঘটনাও নয়। ভল্ট ও ক্যাশবাক্স অক্ষত আছে। টাকাপয়সার এদিক–ওদিক হয়নি। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখার পর এমন ধারণা আরও জোরালো হয়। ভৈরব–কুলিয়ারচর সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) নাজমুস সাকিবের নেতৃত্বে পুলিশের পক্ষ থেকে অসুস্থ হওয়ার কারণ অনুসন্ধান চলছে।

আজ সকালে তিনি বলেন, ‘শুরু থেকেই রহস্য উন্মোচনে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছিল। ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এইটুকু নিশ্চিত হয়েছি, কর্মরত ব্যক্তিরা অচেতন হওয়ার সময় ব্যাংকে আর কেউ ছিলেন না। একজন একজন করে অচেতন হন আর বমি করতে থাকেন। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, আবদ্ধ কক্ষে রাখা জেনারেটর থেকে নিঃসরণ হওয়া বিষাক্ত গ্যাসের প্রভাবে কর্মরত ব্যক্তিরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। চূড়ান্ত ধারণা পেতে আমরা তদন্ত চলমান রাখব।’

সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরা উপশাখার ব্যবস্থাপক সৌমিক জামান খান জানিয়েছেন, তিনি এখন সুস্থ বোধ করছেন। তিনি বলেন, ‘যতটুকু মনে পড়ে, অসুস্থ হওয়ার আগে কাউকে ভেতরে এসে স্প্রে কিংবা অন্য কোনো কিছু করতে দেখেননি। অচেতন হওয়ার আগে মাথা ঘোরাচ্ছিল। এরপর আর কিছু স্মৃতিতে নেই।’