গাইবান্ধায় কলেজছাত্র সিজু মিয়াকে (২৫) হত্যার অভিযোগ এনে ১২ পুলিশ সদস্যসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে আজ বৃহস্পতিবার মামলা হয়েছে। গাইবান্ধার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন সিজুর মা রিক্তা বেগম। মামলায় ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে আরও পাঁচজনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি দেখানো হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী জাহিদ হোসেন খান। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ওই আদালতের বিচারক পাঁপড়ি বড়ুয়া গাইবান্ধা সিআইডিকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
আসামিরা হলেন সাঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাদশা আলম, উপপরিদর্শক (এসআই) মশিউর রহমান ও উজ্জ্বল, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রাকিবুল ইসলাম, মহসিন আলী, লিটন মিয়া ও আহসান হাবিব, কনস্টেবল হামিদুল ইসলাম, আজাদুল ইসলাম, নয়ন চন্দ্র, জয় চন্দ্র ও ধর্মচন্দ্র বর্মণ, থানার সোর্স সাব্বির হোসেন, সাঘাটা এলাকার বাসিন্দা ইউসুফ আলী ও মমিনুল ইসলাম।
মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়, গত ২৪ জুলাই রাত সাড়ে আটটার দিকে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে সিজু মিয়াকে ফোন করে সাঘাটা থানায় ডেকে নিয়ে যান। থানার ভেতরে নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে শরীরের বিভিন্ন স্থানে লাঠি ও বন্ধুকের বাঁট দিয়ে অমানবিক নির্যাতন করেন। সিজুকে গুরুতর জখম করা হয়। সিজু মৃতপ্রায় হয়ে পড়লে আসামিরা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তাঁকে সাঘাটা পাইলট উচ্চবিদ্যালয়–সংলগ্ন পুকুরে ফেলে দেন। এরপর তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করতে লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করা হয়। মারধরের কারণে উপস্থিত লোকজনের সামনেই সিজু মারা যান।
এসব বিষয়ে সিজুর মা রিক্তা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে হত্যার ঘটনায় সাঘাটা থানা মামলা নেয়নি। তাই আদালতে মামলা করেছি।’
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, গত ২৪ জুলাই রাতে থানার সামনে একটি সালিস বৈঠক চলছিল। রাত প্রায় ১০টার দিকে সিজু মিয়া নামের ওই যুবক সাঘাটা থানার কম্পিউটার রুমে যান। তিনি প্রথমে কম্পিউটার অপারেটরকে অভিযোগ লেখার কথা বলেন। অপারেটর তাঁকে বাইরে থেকে লিখে আনার পরামর্শ দিলে উভয়ের মধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সিজু থানায় দায়িত্বরত কনস্টেবলের কাছ থেকে বন্দুক নেওয়ার চেষ্টা করেন। তখন দায়িত্বরত কনস্টেবল চিৎকার করলে পাশের রুমে থাকা এএসআই মহসিন মিয়াসহ কয়েকজন এসে বন্দুক উদ্ধার করেন। এ সময় তাঁকে ধরার চেষ্টা করলে তাঁর কাছে থাকা ধারালো চাকু দিয়ে এএসআই মহসিনকে আঘাত করে পালিয়ে যান। থানা ভবনের পাশে সাঘাটা পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের পুকুরে তাঁকে দেখা যায়। পরদিন সকালে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা পুকুর থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করেন। এই ঘটনার ২৭ দিন পর সিজুর মা আজ আদালতে মামলা করেছেন।