মাটির পেয়ালায় পরিবেশিত খেজুরগুড়ের গরুর দুধের চা স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ক্রেতাদের চা পরিবেশন করছেন উদ্যোক্তা ফয়সাল মাহমুদ। গত রোববার রাতে যশোর শহরের আরবপুর এলাকায়
মাটির পেয়ালায় পরিবেশিত খেজুরগুড়ের গরুর দুধের চা স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ক্রেতাদের চা পরিবেশন করছেন উদ্যোক্তা ফয়সাল মাহমুদ। গত রোববার রাতে যশোর শহরের আরবপুর এলাকায়

ঢাকায় চাকরি ছেড়ে যশোরে মায়ের রেসিপিতে ফয়সালের চায়ের দোকান

আগুনে পোড়ানো মাটির কাপে ধোঁয়া ওঠা গরম-গরম চা। এর সুবাস ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে। খেজুরগুড় আর গরুর দুধ মিলেমিশে বিশেষ এই সুবাসিত আবহ তৈরি করেছে। স্বাদ ও গন্ধে অনন্য এই চা ইতিমধ্যে স্থানীয় বাসিন্দা বিশেষ করে তরুণদের মন জয় করেছে। প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত যশোর শহরের আরবপুর এলাকার ‘হাইপ’ নামের দোকানে ভিড় জমান তাঁরা। শুধু চা-ই নয়, দোকানটির কাবাব-রুটিও ইতিমধ্যে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে।

দোকানটির উদ্যোক্তার নাম ফয়সাল মাহমুদ। তাঁর দাবি, ভালো বেতনে করপোরেট প্রতিষ্ঠানের চাকরি ছেড়ে চা আর কাবাবের এই দোকান দিয়েছেন তিনি।

ফয়সাল মাহমুদ বলেন, ২০১৯ সালে তিনি ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার টেকনোলজির (আইইউবিএটি) মার্কেটিং বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সময় থেকেই তিনি কয়েকটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে পাঁচ বছরের মতো চাকরি করেন। ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে তিনি চাকরি ছেড়ে যশোর শহরের আরবপুর এলাকায় খেজুরগুড়ের দুধ চা ও কাবাব-রুটি তৈরির দোকানটি শুরু করেন।

চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা হওয়ার বিষয়ে ফয়সাল মাহমুদের ভাষ্য, ‘আমার কাছে মনে হলো, যৌবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় চাকরির পেছনে ব্যয় না করে উদ্যোক্তা হতে পারি। সেখানে আমি আরও কিছু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে পারি। সেই চিন্তা থেকে চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা হয়েছি। এখন আমি খুব ভালো আছি।’

একবেলার এই দোকানে প্রতিদিন ১০০-১৫০ কাপ চা বিক্রি হয় বলে জানালেন ফয়সাল মাহমুদ। প্রতি শুক্র ও শনিবার ছুটির দিন থাকায় বিক্রি তুলনামূলক বেশি হয়। প্রতি কাপ চায়ের দাম নেওয়া হয় ৩০ টাকা। এখন দোকানটিতে ফয়সালসহ পাঁচজন কাজ করেন। নিজের বেতন রেখেও তিনি মাসে ৪০ হাজার টাকার মতো কর্মচারীদের বেতন দেন। এ ছাড়া আর বাকি যা থাকে, তা বেশ সন্তোষজনক বলে তাঁর ভাষ্য।

অধিকাংশ ক্রেতা তরুণ হওয়ায় তাঁদের আকর্ষণের জন্য দোকানটির নাম ‘হাইপ’ রাখা হয়েছে বলে দাবি করেন ফয়সাল মাহমুদ। দোকানটির সাজসজ্জায় তারুণ্যের ছোঁয়া রয়েছে, এতে আধুনিকতার সঙ্গে বাঙালিয়ানার একটি মেলবন্ধন স্থাপন করা হয়েছে। ক্যাশ টেবিলটি তৈরি করা হয়েছে পুরোনো আমলের হলুদ রঙের একটি ভেসপা মোটরসাইকেলের সামনের অংশ দিয়ে। জীবন্ত গাছ আর আঁকা ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে দেয়াল। ক্রেতাদের পড়ার জন্য কিছু বই-পুস্তকও আছে।

চাকরি ছেড়ে দোকান দিয়েছেন মার্কেটিং বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রিধারী ফয়সাল মাহমুদ

চায়ের স্টলে গ্রামীণ ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে দেওয়া হয়েছে গোলপাতার ছাউনি। এ ছাড়া ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে হারিকেন, রং করা মাটির ছোট ছোট টিলা, চায়ের কেটলি ও লতানো গাছ। এ ছাড়া রংবেরঙের আলোকসজ্জাও করা হয়েছে।

রোববার রাত ১০টার দিকে হাইপে গিয়ে দেখা গেল, অনেক ক্রেতা দোকানে বসে চা পান করছেন। তাঁদের একজন যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহ্জাহান কবীর। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতেই তিনি বললেন, ‘আমরা বন্ধুরা মাঝেমধ্যেই দল বেঁধে এই দোকানে খেজুরগুড়ের দুধ চা ও কাবাব খেতে আসি। আগুনে পোড়ানো মাটির কাপে খেজুরগুড়ের দুধ চায়ে অন্য রকম সুঘ্রাণ পাওয়া যায়।’

বিশেষ এই চায়ের রেসিপি বিষয়ে জানতে চাইলে উদ্যোক্তা ফয়সাল মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের বাড়িতে এক দিন চিনি ছিল না। তখন আমার মা চিনির বদলে বাড়িতে থাকা খেজুরগুড় দিয়ে চা তৈরি করেন। ওই চায়ের স্বাদ অন্য রকম লেগেছিল। আমি চিন্তা করলাম, খেজুর গুড়ের দুধ চা তো ভালোই লাগে। এই চা তৈরি করে মানুষকে খাওয়ালে কেমন হয়? এমন চিন্তা থেকে এই চা তৈরিতে উদ্যোগী হলাম।’