
২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘ভোট ডাকাতি’র প্রতিবাদে বরিশালে পৃথক বিক্ষোভ সমাবেশ ও কালো পতাকা মিছিল করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট ও গণসংহতি আন্দোলন। আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে নগরের সদর রোডে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
নগরের অশ্বিনী কুমার হলের সামনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমাবেশে বক্তারা বলেন, ২০১৮ সালে ২৯ ডিসেম্বর রাতে অভূতপূর্ব ফ্যাসিবাদী কায়দায় জনগণের ভোটাধিকার হরণ করার মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করে আওয়ামী লীগ।
সমাবেশে ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, বর্তমান সরকার দেশের অনেক উন্নয়ন করেছে। কিন্তু এ উন্নয়নের পেছনে রয়েছে দুর্নীতির মহাযজ্ঞ। ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতা আঙুল ফুলে শুধু কলাগাছ নয়, বটগাছে রূপান্তর হয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দেশকে ধ্বংসের মুখে নিয়ে যাচ্ছে। একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ভোট হয় রাতের আঁধারে। দিনের ভোট ডাকাতি হয়। বঙ্গবন্ধু যে আর্দশ ও নীতি নৈতিকতা নিয়ে বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছিলেন, সেই বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর আদর্শবিরোধী কর্মকাণ্ড চালিয়ে দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করা হচ্ছে।
সিপিবির বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন কমিউনিস্ট পার্টির বরিশাল মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব দাস, দর্জি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক তুষার সেন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফন্টের বিএম কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক বিজন শিকদার প্রমুখ।
একই সময়ে সদর রোডে বিক্ষোভ শেষে আয়োজিত আরেক সমাবেশে গণসংহতি আন্দোলনের নেতারা বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। এই অঙ্গীকারকে ভূলুণ্ঠিত করে রাষ্ট্রের ৫০ বছরে এসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে। শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য কোনো পথ আর খোলা নেই। রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদের বিপরীতে একমাত্র ঐক্যবদ্ধ জনগণের শক্তিই পারে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর ঘটিয়ে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে।
দেশের সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রাখতে ও সব নাগরিকের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সব গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বিকল্প নেই উল্লেখ করে সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, কার্যত ৩০ ডিসেম্বরের ভোট আওয়ামী লীগ ২৯ ডিসেম্বর রাতে সিল মেরে দেশের মানুষের অধিকার হরণ করে দেশের সব মানুষকে এক কাতারে দাঁড় করিয়েছে। মানুষ আর গুম, খুন, অন্যায়, অবিচারের মহোৎসব দেখতে চায় না। দেশের মানুষ এখন একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। এ জন্য অবিলম্বে বর্তমান অবৈধ সরকারকে পদত্যাগ করে অন্তর্বতীকালীন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। না হলে গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জনগণ নতুন ইতিহাস তৈরি করবে।
বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন গণসংহতি আন্দোলন বরিশাল জেলা কমিটির আহ্বায়ক দেওয়ান আবদুর রশিদ। এটি সঞ্চালনা করেন আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাকিবুল ইসলাম। এতে বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলন বরিশাল জেলা কমিটির সদস্যসচিব আরিফুর রহমান, জেলা কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান প্রমুখ। সমাবেশের আগে কালো পতাকা মিছিল বের করে গণসংহতি আন্দোলন। ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘ভোট ডাকাতির ৪ বছর পূর্তি’ উপলক্ষে গণসংহতি আন্দোলন এ কর্মসূচির আয়োজন করে।