চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিন নিতে এসে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা–কর্মীদের তোপের মুখে পড়েছেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের দুই নেতা। তাঁরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রুহুল আমিন এবং সহসভাপতি ও স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদ (স্বাচিপ) জেলা শাখার সভাপতি গোলাম রাব্বানী। আজ বুধবার দুপুরে পুলিশ নিরাপত্তা দিয়ে আদালত থেকে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় তাদের লক্ষ্য করে ডিমও ছুড়ে মারা হয়।
আইনজীবী, প্রত্যক্ষদর্শী ও আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে সংঘটিত শিবির নেতা আসাদুল্লাহ তুহিন হত্যা মামলায় উচ্চ আদালত থেকে আট সপ্তাহের আগাম জামিন পান রুহুল আমীন ও গোলাম রাব্বানী। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী বুধবার তাঁরা জেলা দায়রা জজ আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিনের আবেদন করেন। আদালত ২৮ জুলাই জামিন আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করেন।
এদিকে দুই আওয়ামী লীগ নেতার আসার খবর পেয়ে দুপুর ১২টা থেকে আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো হতে থাকেন ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা। সোয়া ১২টার দিকে দোতলায় জেলা জজ আদালতের বারান্দায় ‘ভুয়া ভুয়া’, ‘আসামিদের ফাঁসি চাই’, ‘শিবিরের অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘জামায়াতের অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ স্লোগান দেওয়া হয়। সেখানে আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম রাব্বানীর এক সমর্থককে মারধরের ঘটনা ঘটে। এ সময় আদালত মুলতবি রেখে জেলা ও দায়রা জজ মো. মিজানুর রহমান এজলাস থেকে উঠে খাস কামরায় চলে যান। পরে পুলিশ আদালতের বারান্দা থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিলে আদালতের বিচারক আবেদনের বিষয়ে আদেশ দেন। আদালত থেকে বের হওয়ার সময় আদালতের প্রাঙ্গণে শিবিরের কর্মীরা রুহুল আমীন ও গোলাম রাব্বানীকে লক্ষ্য করে ডিম ছুড়ে মারেন। পুলিশ তাঁদের দুজনকে থানায় নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে ইসলামী ছাত্রশিবির চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর শাখার সভাপতি আবদুল আজিজ বলেন, ঘটনাটি শিবিরের সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে সংঘটিত হয়নি। ২০১৫ সালে ছাত্রশিবিরের নেতা তুহিনকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। আবেগ থেকে ক্ষোভ থেকে কর্মী–সমর্থকেরা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।
জেলা জজ আদালতের বারান্দায় ও আদালত প্রাঙ্গণে সংঘটিত ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত এবং আদালতকে প্রভাবিত করার একটি অপতৎপরতা বলে মন্তব্য করেছেন আসামিপক্ষের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. গোলাম কবির।
এ বিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিউর রহমান বলেন, নিরাপত্তাজনিত কারণে রুহুল আমীন ও গোলাম রব্বানীকে পুলিশ নিয়ে এসেছে। তাঁদের ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ২৬ জানুয়ারি ছাত্রশিবির নেতা আসাদুল্লাহ তুহিনকে বাসা থেকে চোখ বেঁধে নিয়ে যান র্যাব সদস্যরা। পরে র্যাবের গাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় সড়ক দুর্ঘটনার তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করে র্যাব। ঘটনার ৯ বছর পর ২০২৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা করেন আসাদুল্লাহ তুহিনের মামা মো. কবিরুল ইসলাম। মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, র্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক, সাবেক সংসদ আব্দুল ওদুদ, র্যাব ও পুলিশের কর্মকর্তা এবং আওয়ামী লীগের নেতাসহ ২৮ জনকে আসামি করা হয়। ওই মামলায় যথাক্রমে ২ ও ৩ নম্বর আসামি গোলাম রাব্বানী ও রহুল আমীন।