
ভারী বর্ষণে খাগড়াছড়ি জেলার অন্তত পাঁচটি স্থানে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে একটি বাড়ির আংশিক ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি পাহাড়ি ঢলে জেলার দীঘিনালা উপজেলার কিছু এলাকাসহ নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে পাহাড়ধসের আশঙ্কায় বান্দরবানের লামার বেশ কয়েকটি পর্যটনকেন্দ্র সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে প্রশাসন।
খাগড়াছড়িতে গতকাল শনিবার থেকে আজ রোববার দুপুর পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৯৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় বলে জানান দীঘিনালায় অবস্থিত আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা সুভূতি চাকমা।
আজ ভোরে জেলা সদরের ২৬ কিলোমিটার দূরে মহালছড়ির ধুমনীঘাট এলাকায় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। এতে মহালছড়ির সঙ্গে জালিয়াপাড়ার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া জেলা সদরে রাজশাহী টিলা এলাকায় পাহাড় ধসে পড়ায় বন্ধ হয়ে গেছে খাগড়াছড়ির সঙ্গে ভুয়াছড়ির সড়ক যোগাযোগ।
খাগড়াছড়ি জেলা সদরের আলুটিলা ও ন্যান্সিবাজার এলাকায় সড়কের ওপর পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে সেনাবাহিনী, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দ্রুত মাটি সরিয়ে সড়কের এক পাশে যান চলাচল উপযোগী করেন। এ ছাড়া গুইমারার সিন্ধুকছড়িতে পাহাড়ধসের কারণে একটি বাড়ির আংশিক ক্ষতি হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাকসুদুর রহমান বলেন, সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, আনসার-ভিডিপি ও সড়ক বিভাগের লোকজন ধসে পড়া পাহাড়ের মাটি সরিয়ে যান চলাচলের উপযোগী করেছেন।
এদিকে পাহাড়ধসের ঘটনায় প্রাণহানি ঠেকাতে ১২৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন। আজ সকাল থেকে প্রশাসনের উদ্যোগে শালবন, কুমিল্লাটিলা, হরিনাথপাড়া গ্যাপ, ন্যান্সিবাজার, কলাবাগানসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার জন্য প্রচারণা চালানো হয়। এর মধ্যে কেবল শহরের শিশুকল্যাণ আশ্রয়কেন্দ্রে নারী–শিশুসহ ৫০০ জন আশ্রয় নিয়েছে। অপরদিকে দীঘিনালার ছোট মেরুং বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে ৩৬টি পরিবার। বাকি আশ্রয়কেন্দ্রগুলো খালি পড়ে আছে। অধিকাংশ পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে যেতে ইচ্ছুক নয়। কুমিল্লাটিলা এলাকার আকলিমা আক্তার বলেন, ‘২৭ বছর ধরে স্বামীর ভিটায় আছি। এই ভিটা ছেড়ে গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি নিয়ে যাব কোথায়?’
এ ব্যাপারে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেলায় ১২৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থান ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত মাইকিং করা হচ্ছে। তারপরও অনেকে যাচ্ছেন না। আর যাঁরা আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন, তাঁদের জন্য পর্যাপ্ত পানি এবং খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
এদিকে ভারী বর্ষণে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে দীঘিনালার মাইনী নদীর পানি। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ইতিমধ্যে ডুবে গেছে দীঘিনালার মেরুং ইউনিয়নের সোবাহানপুর, চিটাগাংগ্গ্যে পাড়া ও মেরং বাজারের একাংশ। দীঘিনালা–লংগদু সড়কের হেডকোয়ার্টার এলাকায় পানি উঠে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত কুমার সাহা বলেন, ছোট মেরুং বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩৬টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। তাদের খাবার ও পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পাহাড়ধসের আশঙ্কা, বন্ধ রিসোর্ট
এদিকে বান্দরবানের লামায় ভারী বৃষ্টিতে পাহাড়ধসের আশঙ্কায় মিরিঞ্জা পাহাড়সহ তিনটি পাহাড়ের আবাসিক হোটেল, অবকাশ যাপনকেন্দ্র আজ দুপুর থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থা কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভারী বৃষ্টি না কমা পর্যন্ত পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ থাকবে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মঈন উদ্দিন জানিয়েছেন।
এদিকে বান্দরবান-ওয়াইজংশন-রুমা সড়কে আজ সকালে আবার যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। গত শুক্রবার সড়কের ওপর পাহাড়ধসে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়েছিল। সেনাবাহিনীর ২৬ ইসিবি সড়কের মাটি সরানোর পর যানবাহন চালু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবহনমালিকেরা। একই দিনে আলীকদমের কুরুকপাতা ইউনিয়নের মেনরাতপাড়া এলাকায় ভারী বৃষ্টিতে জুমঘরের ওপর গাছ ভেঙে পড়েছে। জুমঘরে থাকা পাঁচ বছরের এক ম্রো শিশু গাছের নিচে চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে বলে ইউপি সদস্য কাইংপ্রে ম্রো জানিয়েছেন।