মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার আড়ালিয়া গ্রামে মাটির নিচ থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা মর্টার শেলটি নিষ্ক্রিয় করার সময় বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়েছে। বিস্ফোরণের তীব্রতায় আশপাশের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিস্ফোরণের শব্দে তিনটি গরুও মারা গেছে বলে অভিযোগ করেছেন গ্রামের বাসিন্দারা।
মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে আড়ালিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এর আগের দিন সোমবার সকালে গজারিয়া উপজেলার বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের আড়ালিয়া গ্রামের মসজিদসংলগ্ন একটি কৃষিজমিতে মাটি কেটে আইল বানানোর সময় মাটির নিচে বড় লোহাজাতীয় কিছু আঁচ করেন শ্রমিকেরা। স্থানীয় লোকজন এটিকে প্রথমে পুরোনো সীমানা পিলার মনে করেন। পরে সোমবার সন্ধ্যায় পুলিশ জানায়, এটি একটি অবিস্ফোরিত মর্টার শেল।
স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার বিকেল থেকে মর্টার শেলটি নিষ্ক্রিয় করতে কাজ শুরু করে পুলিশের বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা। রাত আটটার দিকে মর্টার শেলটি বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণের তীব্রতায় গ্রামটি কেঁপে ওঠে। এতে ২০০ থেকে ৩০০ মিটার অংশের ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কিছু কিছু অংশ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কোথাও টিনের বেড়া বেঁকে যায়।
বিস্ফোরণে স্থানীয় সেলিম, হারেস, রশিদ, রফিজ, রেনু মিস্ত্রি, ফরিদ হোসেন, আবদুল হান্নান, মানিক মিয়া, জলিল, মুক্তার হোসেন, আবদুল গাফফার, সেলিম মিয়া, বারেকের বাড়িসহ অর্ধশত বাড়িঘর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা। বিস্ফোরণের শব্দে আশিক নামের এক কৃষকের তিনটি গরু মারা গেছে বলে জানান তাঁরা।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী চা–দোকানি আবদুর রশিদ বলেন, বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মর্টার শেলটি নিষ্ক্রিয় করা হয়। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটা বেশি ছিল যে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে তাঁর দোকানের প্রায় সবকিছু উড়ে যায়। আশপাশের অন্তত ৫০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মসজিদ ও বিল্ডিংয়ে ফাটল ধরেছে।
ঘটনাস্থলের চার কিলোমিটার দূরে বালুয়াকান্দি গ্রামের বাসিন্দা আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে আমরা তীব্র ঝাঁকুনি অনুভব করি। প্রথমে বিষয়টিকে আমরা ভূমিকম্প ভাবলেও পরে জানতে পারি আড়ালিয়া গ্রামের উদ্ধার হওয়া মর্টার শেলটির বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে।’
এদিকে এ ঘটনার পর জনরোষে পড়েন পুলিশ, বোমা নিষ্ক্রিয়কারী ও গণমাধ্যমকর্মীরা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত সংবাদকর্মী মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘মর্টার শেলটির বিস্ফোরণ ঘটানোর পর আশপাশের বাড়িঘর কেঁপে ওঠে। এ ঘটনার পর উত্তেজিত জনতা আমাদের ওপর চড়াও হয়। কেন আমরা বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যদের মর্টার শেলটি দূরে কোথাও নিয়ে বিস্ফোরণ ঘটাতে বললাম না, সে জন্য তারা আমাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।’
গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আনোয়ার আলম আজাদ রাত ১০টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ধারণা করা হচ্ছে উদ্ধার করা মর্টার শেলটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের। মর্টার শেলটির বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করার সময় আশপাশের কিছু স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয় লোকজন উত্তেজিত হয়ে পড়েন। পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক আছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানো হয়েছে। সেনাবাহিনী রয়েছে।