
পঞ্চগড়ে জমি–সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে মারামারির ঘটনায় পক্ষে–বিপক্ষে করা দুটি মামলার আসামিদের বেকসুর খালাসের রায় শুনে আদালত চত্বরে বিক্ষোভ করেছেন হত্যা মামলার বাদীপক্ষের লোকজন। রোববার দুপুরে পঞ্চগড় জেলা জজ আদালত চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। এক পক্ষের লোকজন ন্যায়বিচার পাননি দাবি করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় আদালতে আসা উৎসুক লোকজন সেখানে ভিড় করেন। বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টার পর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে ৩০ মার্চ জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগর ইউনিয়নের ঝালিঙ্গিগছ এলাকায় কসির উদ্দিনের পরিবারের সঙ্গে প্রতিবেশী সামসুল হকের পরিবারের লোকজনের জমি নিয়ে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অনেকে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। পরদিন সকালে কসির উদ্দিনের ছেলে মো. এরশাদ রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ওই দিনই রাতে এরশাদের বাবা কসির উদ্দিন বাদী হয়ে তেঁতুলিয়া থানায় ওই ঘটনায় সামসুল হক পক্ষের ২১ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।
ঘটনার প্রায় আড়াই মাস পর ২০১১ সালের ১৪ জুন অপর পক্ষ সামসুল হকের স্ত্রী রনজিনা বেগম পঞ্চগড় আদালতে কসির উদ্দিন পক্ষের ১৯ জনকে আসামি করে একই ঘটনায় একটি পাল্টা মামলা করেন। দুটি মামলার কার্যক্রম একই আদালতে চলছিল।
২০১৩ সালের ২৩ মে পঞ্চগড় সদর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার কাজী আকতার উল আলম পুনঃ তদন্ত করে কসির উদ্দিনের করা মামলায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) আদালতে দাখিল করেন। এ ছাড়া রনজিনা বেগমের করা মামলায় ১৩ জন আসামির বিরুদ্ধে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও তেঁতুলিয়া থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) প্রাণকৃষ্ণ দেবনাথ ২০১৩ সালের ৮ জুন আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
কসির উদ্দিনের করা মামলায় ১২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ এবং রনজিনা বেগমের করা মামলায় ৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ হয়। দীর্ঘদিন আইনি প্রক্রিয়া শেষে কোনো পক্ষই অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারায় আজ রোববার দুপুরে পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এস এম রেজাউল বারী দুটি মামলার সব আসামিকেই বেকসুর খালাসের রায় দেন।
এদিকে রায় ঘোষণার কিছুক্ষণ পরেই আদালত চত্বরে বিক্ষোভ শুরু করেন মারা যাওয়া এরশাদের পরিবারের লোকজন। তাঁরা ন্যায়বিচার পাননি বলে ক্ষোভ প্রকাশসহ নানা অভিযোগ তোলেন এবং বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় বিক্ষোভকারীদের কেউ কেউ চিৎকার চেঁচামেচি করতে করতে সিঁড়ি বেয়ে জেলা জজ আদালত ভবনের তৃতীয় তলায় যান। এ সময় পুলিশ তাঁদের বুঝিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে দেন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানান বিক্ষুব্ধরা। মারা যাওয়া এরশাদের মা রমিছা বেগম বলেন, ‘দিনদুপুরে লোক হায়ার করে আনে আমার ছেলেকে কুড়াল দিয়ে চটায় (কুপিয়ে) মারে ফেলাইচে। আমি এইডার বিচার চাই। আজকে বিচার পাইনি। আমি বিচার চাই, আমার এতিমডাক (এরশাদের ছেলে) কে মানুষ করিবে?’
হত্যা মামলার বাদীপক্ষের (বিক্ষোভকারী) আইনজীবী আবদুল মতিন বলেন, ‘এই মামলায় আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। আদালতের রায়ে আমরা সংক্ষুব্ধ। আমরা উচ্চ আদালতে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব।’ তবে তিনি আদালতের ভেতরে থাকায় রায়ের পর কারা বিক্ষোভ করেছেন এ বিষয়ে কিছু্ জানেন না বলে দাবি করেন আইনজীবী।
দুটি মামলার অভিযোগই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত দুই মামলার সব আসামিকে বেকসুর খালাসের রায় দিয়েছেন বলে জানান একটি মামলার বাদী রনজিনা বেগম ও হত্যা মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবী হাবিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রত্যেকেরই উচিত আইন এবং আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রাখা। কেউ কোনো রায়ের আদেশে যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন তাহলে তিনি উচ্চ আদালতে যেতে পারেন। কিন্তুকে সেটাকে কেন্দ্র করে বাইরে বা রাস্তাঘাটে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা খুবই দুঃখজনক।’