শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ গড়ার কারিগর ছোটবেলার শিক্ষকেরা। ভালো শিক্ষক, সেরা শিক্ষক অনেকেই হতে পারেন, কিন্তু প্রিয় শিক্ষক হাতে গোনা কয়েকজনই থাকেন। প্রিয় শিক্ষক তাঁরা, যাঁরা শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতের পথ দেখান।
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আইপিডিসি-প্রথম আলো প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা ২০২৫ উপলক্ষে সিলেটে আয়োজিত সুধী সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। সিলেট নগরের জিন্দাবাজার এলাকার নজরুল একাডেমির সম্মেলনকক্ষে সিলেট অঞ্চলের এ সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশের প্রথম পর্বে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. নিজাম উদ্দিন, নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের উপাচার্য মোহাম্মদ ইকবাল, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য মোহাম্মদ জহিরুল হক ও সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য মো. আশরাফুল আলম বক্তব্য দেন।
উপাচার্য মো. নিজাম উদ্দিন তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘শিক্ষকদের সম্মান দেওয়ার কথাটা এখন সমাজে খুব একটা প্রচলন নেই বললেই চলে। প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা আয়োজন আশার আলো দেখাচ্ছে। শিক্ষকেরা পথপ্রদর্শক, ড্রিম চেঞ্জার ও অনেক কিছু। আমরা এনালগ থেকে ডিজিটাল হয়েছি, ডিজিটাল থেকে এআইয়ের যুগে এসেছি। যুগ পরিবর্তন হলেও শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থীর সম্পর্ক থাকবেই।’
সুধী সমাবেশে সিলেটের শিক্ষক, সাহিত্যিক, সমাজকর্মী, আইনজীবী, সংস্কৃতিকর্মী, সংগঠকসহ নানা শ্রেণি-পেশার শতাধিক সুধীজন অংশ নেন।
সিলেটের সমাবেশ শুরু হয় প্রথম আলোর ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ও যুব কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক মুনির হাসানের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। প্রথম আলোর সিলেটের নিজস্ব প্রতিবেদক সুমনকুমার দাশের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন আইপিডিসি ফাইন্যান্সের সিলেটের শাখা ব্যবস্থাপক কৃষ্ণপদ সরকার। তিনি বলেন, শিক্ষকদের জন্য বিশেষ আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করতে আইপিডিসি ফাইন্যান্স চালু করেছে ‘প্রজ্ঞা’ শীর্ষক বিশেষ ঋণ প্রকল্প। সহজ শর্ত, দ্রুত অনুমোদন ও ন্যূনতম সুদে শিক্ষক ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা এ সুবিধা পাবেন।
সুধী সমাবেশে ‘আখতার স্যার’ ও ‘মজুমদার স্যার’ শিরোনামে দুটি ভিডিও চিত্র দেখানো হয়। এর ফাঁকে ফাঁকে কয়েকজন সুধী ১ মিনিট করে বক্তব্য দেন। তাঁদের মধ্যে আছেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন মোহাম্মদ মেহেদী হাসান খান ও অধ্যাপক মো. আবুল কাশেম, স্কলার্স হোম মেজরটিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. ফয়জুল হক, নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক লিয়াকত শাহ ফরিদী, মইন উদ্দিন আদর্শ মহিলা কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ কৃষ্ণপদ সূত্রধর, লেখক জামান মাহবুব, মিহিরকান্তি চৌধুরী ও মোস্তাক আহমাদ দীন, সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মো. কবির খান, পরিবেশ সংগঠক আবদুল করিম চৌধুরী প্রমুখ।
বক্তাদের মধ্যে আরও ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আমিরুল ইসলাম চৌধুরী, সিলেট সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অভিজিৎ কুমার পাল, উইমেন্স মডেল কলেজ সিলেটের অধ্যক্ষ আবদুল ওয়াদুদ তাপাদার, সার্ক ইন্টারন্যাশনাল কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ শাহি উদ্দিন, দেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় কুমার নাথ, দুর্নীতি মুক্তকরণ বাংলাদেশ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মকসুদ হোসেন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক কাসমির রেজা, কবি সাজন আহমদ সাজু।
বক্তারা বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে যে শিক্ষকেরা ক খ গ ঘ কিংবা এ বি সি ডি যেভাবে শিখিয়েছেন, এটা দুঃসাধ্য এক কাজ। তাঁরা যে পরিশ্রমটা করেছেন, মা-বাবার পরেই কিন্তু তাঁদের স্থান। এটা ছোটবেলায় মা-বাবার কাছে সবাই শুনেছেন। যখন সবাই বড় হয়েছেন, তখন উপলব্ধি করেন, কথাটা শতভাগ সত্য।
সুধী সমাবেশে বিশিষ্টজনদের মধ্যে কবি পুলিন রায়, বড়লেখা সরকারি ডিগ্রি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. নিয়াজ উদ্দীন, সরকারি মদনমোহন কলেজের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ মুহিবুর রহমান, সিলেট সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের সহকারী শিক্ষক সুভাষ চন্দ্র নাথ, জহিরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জামাল উদ্দিন লস্কর, ফুলবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাকছুমা বেগম, কবি ধ্রুব গৌতম ও মাসুদা সিদ্দিকা রুহী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
২০১৯ সাল থেকে প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা দেওয়া শুরু হয়। এ বছর সম্মাননা দেওয়া হবে আগামী অক্টোবর মাসে।
আয়োজকেরা জানান, শিক্ষকদের সম্মান জানাতে আইপিডিসি ফাইন্যান্স পিএলসি ও প্রথম আলোর যৌথ উদ্যোগে পঞ্চমবারের মতো শুরু হয়েছে ‘আইপিডিসি-প্রথম আলো প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা ২০২৫ ’। আগ্রহী ব্যক্তিরা অনলাইনে (www.priyoshikkhok.com) এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে মনোনয়ন করতে পারবেন। চলতি বছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক—এই দুই ক্যাটাগরি থেকে মোট সাতজন শিক্ষককে ‘প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা ২০২৫’ দেওয়া হবে। এই সম্মাননার জন্য মনোনয়নযোগ্য শিক্ষক হতে হলে তাঁর বয়স কমপক্ষে ৪০ বছর হতে হবে। কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত—উভয় অবস্থায়ই মনোনয়নযোগ্য। মনোনয়নদাতা ও শিক্ষক উভয়কেই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে এবং একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ তিনজন শিক্ষককে মনোনয়ন দিতে পারবেন।